মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশ্বাসে কাজে ফিরলেন শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা ভ্যালির ১২ বাগানের চা শ্রমিকেরা।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ছিলো চা শ্রমিকদের ধর্মঘটের ১১তম দিন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের সবকটি চা বাগানে শ্রমিকরা কাজ করা থেকে বিরত ছিলো। পরে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল বাগানে উপস্থিত হয়ে তাদের আশ্বাস দিলে কাজে ফিরেন চা শ্রমিকরা।
জানা গেছে, দুপুরে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদ আহসান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুনসহ জেলার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কয়েকটি চা বাগানে উপস্থিত হয়ে চা শ্রমিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দেন এবং কাজে ফেরার অনুরোধ জানান।
এসময় জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে গত সোমবারের বৈঠকে কাজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় পরও কি কারণে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছে না তা খতিয়ে দেখেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের কাজে ফিরে যেতে বাগানে বাগানে মতবিনিময় করেন। কথা বলেন, উপজেলার ভাড়াউড়া চা বাগান, জেরিন চা বাগান, কালিঘাট চা বাগান, ফুলছড়া চা বাগান শ্রমিকদের সাথে।
জেলা প্রশাসকের কথায় আশ্বস্ত হয়ে পরে কাজে যোগ দেন জেরিন চা বাগান ও ভাড়াউড়া চা বাগানসহ আরও কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা।
এর মাঝেও কাজে যোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে চা শ্রমিকদের মধ্যে।
কালিঘাট চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি অভান তাঁতী বলেন, ‘আমরা এত দিন ধরে আন্দোলন করছি। হঠাৎ করে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা কাজে যোগ দিবো না। এখন যদি ৩০০ টাকা ঘোষণা দেয়া হয় আমরা এখন কাজে যাবো। আমাদের শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রোববার রাতে শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলে একটা সুন্দর সমাধান করছিলাম। শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে চাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিনের ভিতরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের সাথে কথা বলে ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শ্রমিকরা চা বাগানকে ভালোবেসে কাজে ফিরুক। তাদের দাবী সব বিবেচনা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আজ সকাল থেকে জেলার অনেক চা বাগানে কাজ শুরু হয়েছে। শ্রীমঙ্গলেও চা শ্রমিকরা কাজ করতে চাচ্ছে কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারী তাদের কাজে যেতে বাঁধা দিচ্ছে। শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে। আমরা সাধারণ শ্রমিকদের কাজে যেতে অনুরোধ করছি, তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।’
এদিকে মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলের কয়েকটি বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও জেলার বেশির বাগান ছিল শ্রমিকশূন্য।
এর আগে, ২১ আগস্ট রাতে জেলা প্রশাসক অফিসে প্রশাসন, শ্রমদপ্তরের প্রতিনিধি শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ১২০ টাকা মজুরী রেখেই কাজে যোগ দেযার সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তাব মেনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ইউনিয়নের নেতারা। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আবারো কর্মবিরতিতে রয়েছেন শ্রমিকদের বড় একটি অংশ।