বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভাটি বাংলায় পাকবাহিনী ও রাজাকার আলবদরদের ত্রাস ছিল ‘দাস পার্টি’। যার নেতৃত্বে ছিলেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা ইউনিয়নের সূর্যসন্তান দুর্ধর্ষ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস (শ্যাম)।
আজ ১৬ নভেম্বর ভাটী বাংলার সেই সুর্য সন্তানের ৫১তম প্রয়াণ দিবস।
১৯৭১ সালের এইদিনে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে প্রাণ হারান জগৎজ্যোতি দাস। এসময় তাঁর এক সহযোগী যোদ্ধাও শহিদ হন। এই যুদ্ধকে ‘ঐতিহাসিক বদলপুর যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
১৯৭২ সালে বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত হন অকুতোভয় মুক্তিকামী জগৎজ্যোতি দাস।
১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নিজ জন্মস্থান জলসুখা গ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে বদলপুর গ্রামের দক্ষিণে ‘কইয়াগোপী’ নামক স্থানে জগৎজ্যোতি দাসের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় দাসপার্টির গেরিলা বাহিনী। যুদ্ধের একপর্যায়ে শত্রুর বুলেটে শহিদ হন তিনি। ওই যুদ্ধে তাঁর এক সহযোদ্ধাও প্রাণ হারান। জগৎজ্যোতি দাসের মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ খুঁজে পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা। তারা জগৎজ্যোতি দাসের নিথর দেহের উপর চালায় অমানুষিক পৈশাচিকতা।
আজমিরীগঞ্জ বাজারের প্রাণকেন্দ্রে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয় তাঁর লাশ। মৃতদেহকে ঘিরে উল্লাস করে রাজাকাররা। বাজার থেকে ফটোগ্রাফার এনে লাশের ছবি তোলেন পাকিস্তানী আর্মির মেজর। বাজারে এনে খুঁটির সাথে বাঁধার আগে নৌকায় করে শহীদ জগৎজ্যোতির লাশ নিয়ে পাশবিক উল্লাসে জলসুখা থেকে আজমিরীগঞ্জ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ঘাটে প্রদর্শন করে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা।
জগৎজ্যোতি দাস ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জলসুখা গ্রামের জীতেন্দ্র চন্দ্র দাস ও হরিমতি দাসের পুত্র। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জগৎজ্যোতি ছিলেন সবার ছোট।
সস্কুলজীবনেই তৎকালীন আইয়ুব খাঁন বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। আজমিরীগঞ্জের এমালগেমেটেড বীরচরণ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন এবং তেজোদীপ্ত, বিপ্লবী ও স্পষ্টভাষী ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন।
জগৎজ্যোতি দাস সুনামগঞ্জ কলেজে পড়াকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। যুদ্ধ করেছেন পাঁচ নাম্বার সেক্টরের অধীনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে। অদম্য অপ্রতিরোধ্য শহীদ জগৎজ্যোতি দাস (বীর উত্তম) রাজাকার আলবদরদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ জন্য জীবিত হোক বা মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল তার মাথার দাম।
১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর বদলপুর ইউনিয়নের বদলপুরে সম্মুখ যুদ্ধে পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন ভাটীর রাজধানীর এই সূর্যসন্তান।