আফ্রিকান রুপকথায় পর্তুগালের স্বপ্ন শেষ, শেষ রোনালদোরও। আল থুমামা স্টেডিয়ামে রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই রোনালদোর বিষণ্ণ চেহারায় যেন বিশাল শূন্যতা আঁকড়ে ধরেছিল। দলের এমন বিদায়ে অন্যদের মতো তারও হৃদয় ভেঙে চুরমার। ড্রেসিংরুমে তো যেতে যেতে কান্না আর ধরে রাখতে পারেননি। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে কষ্টটা আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।
অথচ ৩৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এবার খুব করে চাইছিলেন কাতার বিশ্বকাপটা নিজের করে নিতে। ক্যারিয়ারে অর্জন তো কম হয়নি। ক্লাব ও দেশের হয়ে সাফল্য অনেক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন পাঁচবার। অন্য ঘরোয়া ট্রফি তো আছেই। দেশের হয়ে ইউরো জেতার রেকর্ডও আছে। তার এমন সাফল্যে ব্যালন ডিঅর ঝুলিতে উঠেছে ৫ বার। শুধু বাকি ছিল বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ নেওয়া।
হয়তো এক জীবনে সবকিছু পাওয়া সম্ভব হয় না। অনেকেই তা পান না। রোনালদো সেই দুর্ভাগাদের একজন। আস্তে আস্তে বয়স বাড়ছে। ৩৭ বছর বয়সে কাতারে এসে ধরেই নিচ্ছিলেন এটাই শেষ বিশ্বকাপ। সামনের দিকে হয়তো খেলা নাও হতে পারে। মন চাইলেও হয়তো শরীর সায় দেবে না। তার আগেই ফুটবল মাঠ থেকে চিরবিদায়ের ঘোষণটা আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
নিজের ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলতে এসে কোনও সময় দলকে শীর্ষে দেখতে পারেননি। এবার মরুর দেশে প্রথমবার খেলতে এসে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চাইছিলেন। চেয়েছিলেন এমন কিছু করতে যেন ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে সমর্থকদের মণিকোঠায় আরও জোরালো হয়ে থাকতে।
রোনালদোর সব প্রচেষ্টাই বৃথা গেছে। এমনিতে গ্রুপ পর্বে যাই-বা খেলেছেন। নকআউটে গন্জালো রামোসের কাছে জায়গা হারিয়ে মাঠে নামাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আজ তো তাও ৫১ মিনিটে রুবেন নেভাসের জায়গায় খেলার সুযোগ পেয়েছেন। একজন খেলোয়াড়কে প্রমাণের জন্য নেহাত কম খারাপ সময় বলা যাবে না।
৬৮ মিনিটে ফের্নান্দেজের ক্রসে রোনালদো মাথা ছোঁয়াতে পারলে বদলে যেতে পারতো ম্যাচের গতি-প্রকৃতি। শেষ দিকে এসেও চেষ্টা অব্যাহত ছিল। ১০ জনের মরক্কোকে চেপে ধরেও কিছুই করতে পারছিলো না সান্তোসের দল। ১৯৬ ম্যাচে ১১৮ গোলের মালিক রোনালদোর বিশ্বকাপটা তাই শেষ হলো অঝোর কান্নায়। ভক্তরা বলতেই পারেন, ‘কাঁদবেন না রোনালদো, এক জীবনে মানুষ সব পায় না।’