আসন্ন রমজান মাসের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্যতা রক্ষায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী বোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, গাড়ির বডিসহ যেকোনো বিজ্ঞাপন প্রচারে যেকোনো ব্যক্তির ছবি ও কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপন প্রচার না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সিসিকের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এসব প্রচারকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনী বোর্ড, পোস্টার, ব্যানার কিংবা অন্য কোনোভাবে এরকম বিজ্ঞাপন প্রচার হয়ে থাকলে তা অনতিবিলম্বে অপসারণ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, সিসিকের এমন বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিকদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন অনেকে।
কেউ কেউ বলছেন, প্রতিবছরই রমজান মাসে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টার, বিলবোর্ড, তোরণ দিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন। এসব পোস্টার, বিলবোর্ড, তোরণে মেয়রের ছবিও সংযুক্ত থাকে। তাদের প্রশ্ন- সিসিকের ছবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তির পর এবার মেয়র ছবিসহ ঈদ শুভেচ্ছা জানাবেন কি?
অনলাইন পোর্টাল সিলেটটুডে’র প্রধান সম্পাদক কবির য়াহমদ নিজের ফেসবুল আইডিতে লিখেছেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশের ৫০ শীর্ষ দুর্নীতিবাজের একজন হিসেবে ঘোষিত সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট নগরে রমজান মাসে ব্যক্তির ছবি দিয়ে পোস্টার-ব্যানারের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন ‘পবিত্র রমজানের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্যতা রক্ষা’! সিলেটবাসীকে ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাচ্ছেন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ আর সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার এক আসামি। এখানে অবশ্য আরও বর্ম আছে মেয়র আরিফের; তার মুখে রাজনৈতিক দাড়ি আছে, স্থানীয় অনেক ধর্মীয় নেতার প্রিয়জন তিনি। দুর্নীতিবাজ আর হত্যা মামলার আসামিরা কত সহজে ধর্মের ঢাল ব্যবহার করে, আর ওই শ্রেণির মানুষের মুখের ধর্মীয় মূল্যবোধের বাণীতে কত লোক যে সুবহানাল্লাহ জপ করে; ভাবা যায়!’
গণজাগরণ মঞ্চ, সিলেটের মুখপাত্র, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী দেবাশীষ দেবু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্টুডিও’র উপরে সাইনবোর্ডের একপাশে লেখা রয়েছে- ছবি তোলা হারাম- আল খোমেনি। আর আরেক পাশে বড় করে খোমেনির ছবি দেয়া। আবুল বাশারের কোনো একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম এমন। আমাদের মেয়রও ওই স্টুডিও মালিকের মতো। শহরজুড়ে নিজের ছবি ঝুলিয়ে রেখেছেন। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েও ছবিসহ বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন। আর বিলবোর্ডে ঝুলে থাকা ছবি থেকে তো বৈধ-অবৈধভাবে টাকা কামাই করে চলেছেনই। অথচ ছবির প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। আসলে মেয়র সাহেবের জ্বলছে। এ বছরই সিটি নির্বাচন। নগর ভরে গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবিতে। কিন্তু দলীয় চিপায় পড়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনও প্রচারে নামতে পারছেন না। এই জ্বলুনি থেকেই এমন অদ্ভুত ফরমান তার।’
আরেক সংস্কৃতিকর্মী দেবজ্যোতি দেবু ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে- ‘সিলেট এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে মোল্লাতন্ত্রের ঝান্ডাবাহক মেয়রও এগিয়ে যাচ্ছেন। আসুন উনার এই খায়েশ মেটাতে সকলে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’
ছাত্রনেতা নাজিকুল ইসলাম রানা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সিলেটের নগর ভবনের ঘাড়ে রমজানুভূতির ভূত চেপে বসেছে। মেয়র সাহেবকে চল্লিশ দিনের চিল্লায় পাঠালে ভালো হতো। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় শিগগির হয়তো নগরের প্রতিটি মোড়, দেয়াল, ডিভাইডার, ইমারতকে বোরখা পরিয়ে দেয়া হবে! সুদিন আসছে …।’
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খান বলেন, আমরা মূলত রমজান মাসে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবিসহ বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তাছাড়া রমজানের ভাবমূর্তি রক্ষায় ছবিসহ ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড না দেয়ার অনুরোধ করেছি। প্রতিবছরই রমজানের আগে সিসিকের পক্ষ থেকে এমন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে অনুষ্ঠান আয়োজনে ‘ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত’ বিষয়ক একটি খবর ছড়িয়ে পড়লে সিসিক মেয়রের ওপর ক্ষুব্ধ হন নগরীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে সমালোচনা ও আন্দোলনের মুখে গত ১১ মার্চ এক জরুরি সভা আহ্বান করে সিসিক মেয়র জানান, সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার ব্যবহার করতে কোনো দল বা সংগঠনকে ভাড়া দেয়া লাগবে না।