কে বলবে কয়েকদিন আগের পিএসজির চিত্রটা ছিল একেবারেই অন্যরকম! ম্যাচ হেরে দর্শকদের বিষমাখানো দুয়ো শুনতে শুনতে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন লিওনেল মেসি। অন্যদিকে সাবেক ফুটবলারদের দেওয়া পিএসজি ছেড়ে বার্সেলোনায় ফেরার পরামর্শ এবং ফরাসি ক্লাবটির প্রচারণার ভিডিও থেকেও বাদ। সেই মিশ্র অনুভূতি তৈরি করা সময়ে মাঠে নেমে মেসির ভাবটাই এমন- যেন কিছুই হয়নি! আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী তারকার তো এমনই হওয়া উচিত। তার গোলে জয়ে ফিরল পিএসজি, ফেরালেন স্বস্তিও।
ফরাসি জায়ান্টসদের চলতি মৌসুমে সর্বশেষ ভরসা লিগ ওয়ান। কেননা, ফ্রেঞ্চ কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে তাদের হতাশাজনক বিদায় নিতে হয়েছে। তবে অবশিষ্ট থাকা লিগ ওয়ানেও ক্লাবটির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আশানুরূপ নয়। এর আগে টানা দুই ম্যাচে তারা পরাজয় নিয়ে ফিরে। ফলে লীগ টেবিলের দুইয়ে থাকা লেন্সের সঙ্গে তাদের ব্যবধান নেমে আসে তিনে। তাই ম্যাচটি জিততেই হত মেসিদের।
শনিবার (৮ এপ্রিল) রাতে প্রতিপক্ষ নিসের মাঠে পিএসজি শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আক্রমণাত্মক খেলায় ম্যাচের ২২ মিনিটেই লিড পেতে পারত ফরাসি ক্লাবটি। দানিলো পেরেইরার খুব কাছ থেকে দেওয়া হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। অবশ্য এরপর তাদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। দলের ত্রাতা হয়ে আসেন আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। নুনো মেন্ডেসের ক্রস নিসের এক ডিফেন্ডার ব্লক করার পর বল ফিরে আসে মেসির পায়ে। সেখান থেকে শরীর কিছুটা ঘুরিয়ে বাঁ পায়ের শটে তিনি বল জালে জড়ান। মেসিকে নিয়ে দুয়োধ্বনি দেওয়া দর্শকরা তখন মেতে ওঠেন কাঙ্ক্ষিত সেই গোলে। লিগ ওয়ানের চলতি আসরে এটি তার ১৪তম গোল।
পিছিয়ে পড়ে আক্রমণের ধার বাড়ায় নিস। প্রথমার্ধের শেষ দিকে তারা দুটি ভালো সুযোগও তৈরি করে। প্রথমটি ছিল কিফহেন থুরামের ক্রসে তেরেম মোফির শট, পরেরটি মোফির হেড। দুটিই ঝাঁপিয়ে প্রতিহত করেন পিএসজি গোলরক্ষক দোন্নারুমা। লিগে টানা চার ম্যাচ ড্র করে আসা নিস নিজেদের মাঠে সমতায় ফেরার ব্যাপক চেষ্টা চালায়। তবে বিরতির আগে আর কেউ গোল পায়নি।
নিসের সেই ধারালো আক্রমণ দ্বিতীয়ার্ধেও বজায় ছিল। তবে এবারও তাদের ঠেকিয়ে দেন দোন্নারুমা। নিস ফরোয়ার্ডরা ৫২ ও ৫৮ মিনিটে দুটি ভালো সুযোগ তৈরি করে। প্রথমে দান্তের ভলি অবশ্য কারোরই আটকানোর উপায় ছিল না। তবে ক্রসবারের ভেতরে লেগে নিচে পড়লেও অল্পের জন্য বল গোল লাইন পার হয়নি। এরপর বক্সের একটু ওপর থেকে ইউসুদ নাদায়িশিমিয়ির বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে ফেরান দোন্নারুমা। গোলরক্ষক ছাড়াও এই সময় বেশ দৃঢ়তা দেখিয়েছেন পিএসজি ডিফেন্ডার মার্কিনিয়োস ও সার্জিও রামোস।
৭৬ মিনিটে পিএসিজ তাদের গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করে। মেসির কর্নার থেকে লাফিয়ে হেডে বল জালে জড়ান রামোস। এর আগে দু’বার ভালো সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপে। এছাড়া ম্যাচের যোগ করা সময়ে নিস গোলরক্ষক কাসপার স্মাইকেল আশরাফ হাকিমির শট রুখে দিলে পেয়ে যান মেসি। শট না নিয়ে তিনি বল বাড়ান এমবাপের দিকে। কিন্তু এমবাপে এবারও ক্রসবারের ওপর দিয়ে মেরে সহজ সুযোগ হারান। অবশ্য শেষ বাঁশি বাজার সময় পিএসজি এগিয়ে ছিল ২-০ ব্যবধানে। স্বস্তির জয় নিয়ে তারা পরের ম্যাচে টেবিলের দুই নম্বরে থাকা লেন্সের মুখোমুখি হবে।
এই ম্যাচ জয়ে ৩০ ম্যাচে পিএসজির পয়েন্ট ৬৯। তাদের পরের অবস্থানে থাকা লেন্সকে তারা আবারও ৬ পয়েন্টে পিছিয়ে দিয়েছে।