চুনারুঘাট উপজেলার ‘চা-কন্যা’ খায়রুন আক্তার চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত। স্থানীয় লোকজনের কাছে খায়রুন ‘চা-কন্যা’, ‘অগ্নিকন্যা’, ‘স্লোগানকন্যা’ সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।
চা বাগানে ছোট থেকে বড় সবাই তাকে ‘দিদি’ বলে ডাকে। এ পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন খায়রুন। প্রতীক পান ‘কলস’। শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে থাকা খায়রুন শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেছেন।
বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত তথ্যে দেখা গেছে, খায়রুন ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ফলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য চার প্রার্থী জামানত হারাতে চলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চা বাগানের শ্রমিকরা সভা ডেকে তাকে প্রার্থী করেছেন। মনোনয়ন ফরম কেনা, প্রচারণার কাজ সহ সব ব্যয় মিটিয়েছেন তারা। ১০ টাকা করে গণচাঁদা তুলে, নানাজনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে সেই খরচের ধাক্কা সামলানো হয়েছে। খায়রুনের বিজয়ে চা বাগানগুলোতে রীতিমতো উৎসব বিরাজ করছে।
খায়রুন আক্তার এ বিজয়ে আনন্দ এবং সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উপজেলার চান্দপুর চা বাগানের পাশে মা মল্লিকা খাতুনকে নিয়ে থাকেন তিনি। মা হাঁস-মুরগি বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন।
২০১২ সালে খায়রুনের বাবার ক্যানসার ধরা পড়ে। গরু-ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। বাবার অসুখের জন্য এসএসসির টেস্ট পরীক্ষাটা আর দেওয়া হয়নি খায়রুনের। চা শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দিতে হয়। দুই বোন, এক ভাই ও মাকে নিয়ে অতিকষ্টে সংসার চালানোর পর বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলে পরিচিতি পান খায়রুন।