সাত সপ্তাহের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল সিলেটের চা বাগান এলাকা। টানা ১৫ দিন কর্মবিরতির পর আজ মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চা শ্রমিকরা। চা শ্রমিকদের এই আন্দোলনে সংহতি ও একাত্মতা পোষণ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।
মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়া ও দলদলি চা বাগানের কয়েক’শ শ্রমিকরা। এসময় দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে চা শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে। ঘড়ির কাটায় বেলা তিনটা বাজার কয়েক’শ শ্রমিক স্টেডিয়ামের সড়কে অবস্থান নেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে এসে যোগ দেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়া, দলদলি চা বাগানের শত শত শ্রমিক। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ অংশ নেন। এসময় তারা বেতন নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, চলবে না/বেতন ভাতা না পেলে, রাজপথ ছাড়বো না/মালিকের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, ৭ সপ্তাহের বেতন না পাওয়ায় ঘরের চুলায় আগুন জ্বলছে না। আটার রুটি খেয়ে আর ক’দিন চলা যায়। অনেকেই লাকড়ি কুঁড়িয়ে অল্প দামে তা বিক্রি করে খরচাপাতি জোগাচ্ছেন। নিঃশর্তে বেতনভাতা পরিশোধ না করলে আরো তীব্র আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
চা শ্রমিকদের এই আন্দোলনের সংহতি ও একাত্মতা পোষণ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তানজিনা বেগম নামে এক শিক্ষার্থীর বলেন, ‘চা শ্রমিকদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা একাত্মতা পোষণ করতে এখানে এসেছি। আমরা নিজেদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই এখানে এসেছি। তারা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছেন, তাদের শ্রমের মজুরি তারা পাচ্ছেন না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মালেকা খাতুন সারা বলেন, ‘চা শ্রমিকরা বেশ কয়েকদিন যাবৎ লাগাতার আন্দোলন করছেন। তাদের আজকের এই কর্মসূচিতে আমি নিজেও এসে যোগ দিয়েছি৷ দেখুন, চা শ্রমিকরা তো এদেশেরই জনগণ। তারা দীর্ঘদিন থেকে তাদের বেতন পাচ্ছেন না। বিগত সরকার দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। আমি মনে করি তাদের এই সংকট নিরসনে মালিক পক্ষেরও যেমন দায় রয়েছে, তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও করণীয় আছে। আমরা চাইব, শিক্ষার্থী ও সাধারণ শ্রমিক শ্রেণি রয়েছেন তাদের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের দাবিটা সরকার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি যাতে করে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
চা শ্রমিকদের এই কর্মসূচিতে এসে একাত্মতা পোষণ করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘চা শ্রমিকগণ আমাদেরই অংশ। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি ইতোমধ্যে সিলেটে জেলা প্রশাসকের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন খুব শীঘ্রই এর একটা সমাধান হবে।
সমাবেশ শেষে বিপুলসংখ্যক শ্রমিকেরা এয়ারপোর্ট রোডে এক বিশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি এয়ারপোর্ট অভিমুখে কিছুদুর গিয়ে ফের লাক্কাতুরা ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফটকে এসে শেষ হয়।