গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে বানিয়াচংয়ের হাজারো হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও সবজি ক্ষেত। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন রোপা আমন ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষীরা।
বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি কাঙ্খিত বৃষ্টির। আবহাওয়ার এই বৈরীতায় আমন চাষ নিয়ে সংকটে পড়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু গত বুধবার মধ্যরাত থেকে তিনদিনের ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকদের সেই স্বপ্ন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বানিয়াচংয়ে ৮হাজার ৪’শ ৫৮হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রার অধিক চাষাবাদ করা হয়েছে। রবি মৌসুমে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৬৫ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বর্ষণে হরিফা, চিনাউরি, দিঘলোন, বুলিয়া, মাউতপুর, দুর্গাপুর, আলীপুর, নিশং, দৌলতপুর, ভাটি ধুইল্যা, ভাটি ধুম্বন, ভাটি গঙ্গাজল, ধারার পাড়, হরমাইন্নার হাওড়সহ অনেক এলাকায় হাজারো হেক্টরে আমনের চারা পানিতে তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে আর্থিক মুনাফা লাভের আশায় বাড়ির আশ-পাশে শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মূলা, কাঁচামরিচ, টমেটো, বরবটি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক ও লাউ আগাম সবজি চাষ করছিলেন কৃষকরা। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগ সবজির জমি।
উপজেলার তকবাজখানী গ্রামের কৃষক আব্দুল আহাদ মিয়া বলেন, অনেক কষ্ট করে বাড়তি দামে তেল ও সার কিনে ৭হেক্টর জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেই জমি এখন পানির নিচে। যদি দুই একদিনের মধ্যে পানি না নামে তাহলে ধানের চারা নষ্ট হয়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
উপজেলার মাতাপুর গ্রামের কৃষক মুছা মিয়া বলেন, ‘ধার করে প্রায় ৫হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। টানা বৃষ্টিতে সেই জমি এখন পানির নিচে। ধানের চারা দেখা যাচ্ছে না। এই ফসল নষ্ট হলে নিঃস্ব হয়ে যাবো।’
উপজেলার তারাসই ও মজলিশপুর গ্রামের মো. নবী হুসেন এবং ইসা মিয়া বলেন, ‘আমাদের গ্রামসহ আশপাশের এলাকার অনেক কৃষকের রোপা আমন, টমেটো, মূলা, ঝিঙে, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, খিরাসহ বেশ কিছু আগাম সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। আমরা কিভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেব ভেবে পাচ্ছি না!’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. এনামুল হক বলেন, ফসলের জন্যে এই সময় বৃষ্টিটা অনেক প্রয়োজন ছিলো। যদিও অনাকাঙ্খিত টানা বর্ষণে কৃষকদের প্রায় ১হাজার ৭০হেক্টর জমি ও ৫০হেক্টর জমির আগাম সবজি ক্ষতি হয়েছে। তবে যদি বৃষ্টি আর না হয় এবং দ্রুত পানি নেমে যায়, তাহলে ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
ডুবে যাওয়া ক্ষেতের পানি নেমে গেলে পরবর্তীতে ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষকদের রবিশস্য চাষাবাদ করে ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে বলে জানান তিনি।