যে মামলায় টিকটকার বাইজীদের মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে

উদ্বোধন হওয়া স্বপ্নের পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের দুইটি নাট খুলে টিকটক ভিডিও বানানো মো. বাইজীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হচ্ছে। আইনটির যে ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হবে, সে ধারায় এ ধরণের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি, এটা পরিকল্পিত।

সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেছেন, বাইজীদের এই কাজের পেছনে নাশকতার চেষ্টা থাকতে পারে।

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রোববার রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে সন্ধ্যায় সেই যুবককে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরে জানা যায়, তিনি বাইজীদ তালহা নামে পরিচিত। তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ।

সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাইজীদ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নাট খুলেছিলেন সেতুর ক্ষতি করার উদ্দেশে। এমন অভিযোগে মামলা বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এ মামলা প্রক্রিয়াধীন। থানা কর্তৃপক্ষই বাদী হবে।’

বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক (স্যাবোটাজ)’ কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্য এবং শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।

এই আইনে ১৫ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো রেলপথ, রোপওয়ে, রাস্তা, খাল, সেতু, কালভার্ট, বন্দর, ডকইয়ার্ড, লাইটহাউজ, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার স্থাপনার দক্ষতা বিনষ্ট বা ক্ষতিসাধনের মতো কাজ করা যাবে না।

এ ধরনের অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া, যাবজ্জীবন বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে রাখা হয়েছে এ আইনে।

বাইজীদকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা তুলে ধরে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছি সে উদ্দেশ্যমূকলভাবে এই কাজ করেছে। আমরা বিস্তারিত আগামীকাল (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনে জানাব।’

জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বাইজীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও পরীক্ষা করেছে সিআইডি। জানা গেছে, তিনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সা‌বেক সভাপ‌তি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএন‌পি ও ছাত্রদ‌লের মি‌ছিল-মি‌টিং‌য়ে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি।

তার মোবাইল ফোন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথাও জানিয়েছে সিআইডি। সব কিছু যাচাই বাছাই করেই তারা সিদ্ধান্তে আসেন, নিছক হেয়ালি নয়, পরিকল্পিতভাবে সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলেছেন এই যুবক।

পুলিশ জানায়, শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন বাইজীদ।

৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই যুবক সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। যিনি ভিডিও করছিলেন তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দেহ।’

নাট হাতে নিয়ে জবাবে বাইজীদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের… পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’

এ সময় পাশে থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।’

সূত্র : নিউজবাংলা