বাইশে’র বন্যার কথা স্মরণ করি। ভয়াবহ সেই সময়। আমাদের প্রাণের বাঘা’র নব্বই শতাংশ ভূমি তখন জলনিমগ্ন। বাঘা’র হাওর যেন সাগরের মত বিশাল জলের আঁধার।
আমরা ক’জন মিলে মানুষের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য হুটহাট ম্যাচ, মোমবাতি, পানির বোতল, বিস্কুট নিয়ে তাদের জলবেষ্টিত বাসগৃহে হাজির হই। মানুষের ভয়াবহ অবস্থা দেখে আমরা সেই যাত্রা আরো প্রলম্বিত করতে উৎসাহিত হই। সাথে জুটে যায় আরো কয়েকজন উদ্দীপ্ত তরুণ। আমরা একে একে চারটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে নিজেরা রান্না করে খাবার সরবরাহ করি। খাদ্য সহায়তার সামগ্রী নিয়ে উত্তাল বন্যায় উদ্বাস্তু মানুষের ঘরে ঘরে নৌকা যোগে পৌঁছে যাই।
বন্যা পরবর্তী সময়েও আমরা সাধ্যমত মানুষকে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পুনর্বাসনসহ বন্যা কবলিত একটি স্কুলে শিশুদেরকে বন্যা পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়মুখী করতে চার শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের খাতা, কলম, ফাইল, পেন্সিলসহ শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করি।
এসব কাজের সুবাদে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখেছি মানুষের সেকি আর্তনাদ! মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য আমাদের সামান্য উদ্যোগগুলো কতটা কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে, তা প্রত্যক্ষদর্শীমাত্র বিচার করবেন।
আমাদের একের পর এক উদ্যোগে সাড়া দেন সর্বস্তরের জনগণ। দেশে-বিদেশে অবস্থানরত দরদী মানুষেরা যারা সবসময় আমাদের অর্থ, সময়, মেধা ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন- তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা আজীবন।
আমাদের প্রাণের বাঘাকে বাইশে’র বন্যা থেকে আবারো সাবলীলরূপে ফিরিয়ে আনি। আমরা যে প্লাটফর্মে কাজ করেছি তার নাম ‘টিম বাঘা’। আমরা অল্প সময়েই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, যার দরুন মানুষের পাশে যেকোনোভাবে দাঁড়ানোটা একটা সামাজিক দায়বদ্ধতার আবশ্যকতা সৃষ্টি করেছে।
আমরা টিম বাঘাকে যুগপৎভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি প্রবলভাবে; এ যাত্রার যেন অন্ত নাই।
এবার ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি হত-দরিদ্রদের মাঝে সামান্য ঈদ উপহার ‘খাদ্য সামগ্রী সহায়তা কার্যক্রম’। আমরা পূর্বের ন্যায় গণমানুষের একাংশের কাছ থেকে গণচাঁদা সংগ্রহ করে অত্যন্ত চৌকসভাবে নিজেদের মেধা, শ্রমের সম্মিলিত প্রয়াসে এই কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি নতুন ধারায় ভিন্নভাবে আমরা কাজ করে গেছি। আমরা সাংগঠনিক সভাগুলোতে গৃহিত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করে গেছি দক্ষতার সাথে। মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে আমরা অন্ধকার রাতে পৌঁছে দিয়েছি আমাদের সামান্য সহায়তা। মানুষজন আমাদেরকে তাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করেছেন।
আমরা থামছি না। আগামী দিনগুলোতেও সমাজের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাধ্যমত মানুষকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিগত দিনে আমাদের অনেক সহযোদ্ধারা আমাদের পাশে ছিলেন। কিন্তু জীবিকার তাগিদে তারা আজ প্রবাসে। আমরা কার্যক্ষেত্রে তাদের অনুপস্থিতির অভাব বোধ করেছি। আগামীতেও আমাদের অনেক সদস্যরা লেখাপড়া ও জীবিকার অন্বেষনে প্রবাসে যাবেন। আমরা তাদের অনুপস্থিতিকেও একইভাবে দেখব।
একটা কথা না বললেই নয়, আমরা একেকটা উদ্যোগ হাতে নিয়ে সেটা বাস্তবায়নে অর্থের সংকুলানে অনেক প্রবাসীদের শরণাপন্ন হয়েছি, তারাও সাধ্যানুসারে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা অনিমেষ৷
পরিশেষে সবাইকে অনিঃশেষ শুভকামনা জানাই। ‘টিম বাঘা’ এগিয়ে যাক বহুদূর।