চলতি অর্থবছরে সুনামগঞ্জের হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ মতে, তিনি বেসরকারি টেলিভিশন ও পত্রিকার অন্তত ১৮ জন সাংবাদিকের মাঝে ১০ হাজার টাকা করে বিতরণ করেছেন।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নিজের কার্যালয়ে বসে এই টাকা বিতরণ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। এ প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তাসহ ঘুষের টাকা পাওয়া একজন সাংবাদিক।
জানা যায়, চলতি বছর হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। এতে করে বিপাকে পড়ে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া গেল ১১ ফেব্রুয়ারি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের অনিয়মের জন্য শাল্লা উপজেলার ইউএনওসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পিআইসির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে বসে হাওর বাঁচাও আন্দোলন এবং ঘটনাটি খুব আলোড়ন সৃষ্টি করায় সংবাদ প্রকাশ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো। এরই প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে আর সংবাদ প্রকাশ না করতে সুনামগঞ্জে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে টাকা দিয়ে ‘নিজের করে নেন’ নির্বাহী প্রকৌশলী।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, শনিবার রাতে হঠাৎ করে আমাদের অফিসে একে একে সাংবাদিকদের ভিড় লেগে যায়। সবার মুখে শুনতে পাই আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার স্যার না কি সব সাংবাদিককে ঈদের বোনাস দিচ্ছেন ১০ হাজার টাকা করে। আপনি এলে আপনিও টাকা পাবেন।
এদিকে একই সময়ে ফোন আসে দৈনিক সকালের সময়ের প্রতিনিধি এ কে এম শহীদুল ইসলামের কাছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, উনি (নির্বাহী প্রকৌশলী) লুকিয়ে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। তিনি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আমাকে। আমি গ্রহণ করিনি। তবে অনেক সাংবাদিককে তিনি টাকা দিয়েছেন। এগুলো আমরা আড়ালে বসেই দেখেছি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. শামছুদ্দোহা বলেন, হ্যাঁ, সাংবাদিকরা এসেছিলেন আমাদের অফিসে। তবে আমার কক্ষে কেউ আসেননি। তারা উপরের তলায় গিয়েছিলেন। কিন্তু কেন, কী কারণে গেছেন সেটা জানি না।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদারকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার ব্যবহার করা সরকারি নম্বরটি বন্ধ করে দেন। পরে তার বাসভবন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে গেলে তিনি সাংবাদিক আসার খবর পেলে গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারবো। এরকম কাজ করে থাকলে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর তিনি সরকারি ফোন নম্বর চাইলেই বন্ধ করে রাখতে পারেন না। সেটির অধিকার আমাদের কারোর নেই। এটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।