সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশিরভাগ গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গত দুইদিনে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ আতঙ্কে দিন-রাত পার করছে। উপজেলার নিচু অঞ্চলের অনেক বাড়ি-ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করায় লোকজন ছুটছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিকেল ৪টায় কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কোম্পানীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ি গুচ্ছগ্রামও শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা পরিবারের লোকজনকে নিয়ে নৌকাযোগে বাড়ি ছেড়ে ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দুইদিন ধরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাস্তাঘাট ও বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়েছে। আরও পানি বৃদ্ধি পেতে পারে- এ আতঙ্কে তারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে কিছু মালামাল ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।
বন্যার পানি না কমায় গত ১৬ দিন ধরে অনেকেই বসবাস করছে এই দু’টি আশ্রয়কেন্দ্রে। যারা গত তিন থেকে চার দিন আগে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন, তারাও আবার ফিরে আসছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সাইদুর রহমান (৩৪) বলেন, কয়েকদিন আগের বন্যায় বাড়ি-ঘর ভেঙে সবকিছু ভেসে গেছে। অনেক কষ্ট করে থাকার ঘরটি কোনোরকমে বসবাস করার জন্য মেরামত করেছিলাম। গত দুইদিন ধরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার ঘরের মধ্যে পানি ঢুকেছে। পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে ঘরে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই বলে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। গত তিনদিন আগে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাড়িতে গিয়ে যে আবার বন্যাকবলিত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে হবে এটা কল্পনাও করিনি।
একই গ্রামের আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার শতাধিক পরিবারের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এ ঘরগুলোর অনেক মানুষ এখনও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে। যারা দুই-তিনদিন আগে ঘরে ফিরেছিলেন, আবার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তারাও আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।
ইছাকলস ইউনিয়নের পুটামারা গ্রামের ইউসুফ মিয়া বলেন, বন্যায় আমাদের দুই ভাইয়ের ঘর ভেঙে মাটির সাথে মিশে গেছে। ১৫ দিন ধরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে আছি। পানি কমে যাওয়ায় ভেবেছিলাম বাড়িতে ফিরে বাড়ি-ঘর কোনোরকমে মেরামত করে বসবাস করব। কিন্তু আবার বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে নিজ বাড়িতে বসবাস করা দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টুকেরগাঁও গ্রামের বাছির মিয়া বলেন, দুইদিন ধরে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার বাড়ির সামনের ফসলি জমিতে পানি ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরের সামনে চলে এসেছে। যে কোনো সময় ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে যেতে পারে। যদি পানি আরও বাড়ে, তাহলে পরিবারের ১৯ জন সদস্য নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিয়াদ আলী বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। আমরাও তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ায় জন্য সহযোগিতা করছি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারণকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।