প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুবলীগ নেত্রীর স্লোগান, প্রতিবাদ করায় মারধর!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগানের প্রতিবাদ করায় সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগ নেত্রীদের হাতে মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নিজ দলের আরেক নেত্রী। এ ঘটনায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে বিচার চেয়েও কোনো সহযোগীতা পাননি তিনি। এমনকি থানায় সাধারণ ডায়েরি করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এ অভিযোগ করেন সিলেট জেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাসনিম বিনতে স্বর্ণা। এসময় উপস্থিত ছিলেন মারধরের শিকার মহানগর মহিলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কল্পনা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে মারধরের সুষ্ঠু বিচার ছাড়াও সিলেট জেলা ও মহানগর যুব মহিলা লীগের কমিটি বাতিলের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তাসনিম বিনতে স্বর্ণা জানান, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাসীদের অপকর্মের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে জেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সিলেট মহানগর মহিলা যুবলীগ। এমন সময় মরিয়ম পারভীন নামে কথিত নেত্রী কিছু উচ্ছৃঙ্খল মেয়েদের নিয়ে মিছিল বের করেন। মিছিলে ‘শেখ হাসিনার কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ স্লোগানের প্রতিবাদ করায় মরিয়ম তার সঙ্গী আফিয়া ও তৃষ্ণাসহ কয়েকজনকে নিয়ে সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কল্পনা বেগমকে বেধড়ক মারধর করেন। এসময় যুব মহিলা নেত্রীরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে কল্পনাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ এখনও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এছাড়াও বিষয়টি যুবলীগ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

সংবাদ সম্মেলনে মারধরের বিষয় ছাড়াও সিলেট জেলা ও মহানগর যুব মহিলা লীগের কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাসনিম বিনতে স্বর্ণা।

তিনি জানান, সম্মেলনের মাধ্যমে গত মাসে সিলেট জেলা ও মহানগর মহিলা যুবলীগের কমিটি গঠনের কথা ছিল। সে মোতাবেক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু সম্মেলনের দিন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ কথিত নেত্রী মরিয়ম পারভীনের নাম মহানগর যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে। মরিয়ম সিলেটের আওয়ামী লীগ ও কোনো অঙ্গ সংগঠনের সাথে জড়িত নয়। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তাসনিম বিনতে স্বর্ণা আরও বলেন, মরিয়ম জামায়াত শিবির সমর্থক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। নগরের কাজলশাহ এলাকায় মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিচতলায় কয়েকটি দোকান ভাড়া নিয়ে তিনি অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর চারটি দোকান ভাড়া নিয়ে হিয়ারিং সেন্টার খোলার কথা বলে ‘পেটুকবাড়ি’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট খোলেন। সেখানে নিয়মিত আড্ডার আসর বসান এবং মেয়েদের নিয়ে অশালীন ও অনৈতিক কাজ করান। কেউ প্রতিবাদ করলে নারী কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে হেনস্থা করার হুমকি দেন। মরিয়মকে সহযোগিতা করছেন নিজ দলের স্থানীয় নেতাকর্মী, চিকিৎসক ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর। তাদের ছত্রছায়ায় দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে ওঠছেন মরিয়ম।

স্বর্ণা বলেন, সিলেট জেলা ও মহানগর মহিলা যুব লীগের কমিটি গঠনে সাংগঠনিক কোনো নিয়ম নীতি মানা হয়নি। তিনি জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও তাকে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের টাকার বিনিময়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মরিয়ম ছাড়াও সুফিয়া ইকবালকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য নেত্রী আওয়ামী লীগ ও মহিলা যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়।

তিনি বলেন, বিতর্কিত এ কমিটির সিলেটে জেলা ও মহানগর যুব মহিলা লীগের সম্মান ক্ষুণ্ণ করছে। এ কমিটি বহাল থাকলে সিলেটের যুব মহিলা রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। অবলম্বে এ কমিটি বাতিল ও যুব নেত্রীকে মারধরের সুষ্ঠু বিচারসহ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ এবং সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।