প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি হয়েছে। দেবীকে চোখের জলে বিদায় জানাতে বিভিন্ন নদীর তীরে জমায়েত হোন হাজার হাজার ভক্ত। বিভিন্ন মন্দির ও পাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় নদীতে।

রোববার (১৩ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩৯টি পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের লক্ষ্য বিজয়ী শোভাযাত্রা বের হয়। উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন এবং বিজিবির কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং থানা পুলিশের কড়া নজরদারিতে কোন প্রকার বিশৃংখলা ছাড়াই উৎসাহ উদ্দীপনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।

এর আগে মণ্ডপ গুলোতে চলে সিঁদুর খেলা, মন্ত্রপাঠ আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান।

বিকেল ৫টায় জাফলং চা-বাগান এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় বিজিবির পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা দেয়া হয়। এসময় সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমানসহ বিজিবির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা। নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। দেবীর অবস্থানকালে এই পাঁচ দিন পৃথিবীতে ভক্তরা দেবী মার বন্দনা করেন।

দশমী পূজা উদযাপনের প্রধান আচারের অংশ হিসেবে এদিন নারীরা সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। শহরের মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন, যা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার অংশ। এই আচারটি দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারপর হিন্দু নারীরা একে অপরের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে জীবনে সমৃদ্ধি কামনা করেন।

হাজারো মানুষ প্রতিমা বিসর্জন দেখতে জড়ো হয়। বিসর্জনকালে অনেক ভক্তের চোখে জল চলে আসে, সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। আবার অনেকেই ক্ষণটিকে সুন্দর করে কাটাতে নেচে-গেয়ে উদযাপন করেন। বিসর্জনের আয়োজন দুর্গা পূজার স্থায়ী সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও ভক্তির প্রদর্শন করে।