পাকিস্তানের বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দেশটি সফরে গেছেন হলিউড তারকা ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দেশটিতে পৌঁছে বন্যাকবলিত সিন্ধু প্রদেশের দুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডন।
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি সরেজমিনে দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র অবলোকন করেছেন। মানুষের প্রত্যাশা এবং বিদ্যমান দুর্ভোগ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
এর আগে হেলিকপ্টারযোগে সিন্ধু প্রদেশের দাদু এলাকার জমজামা তেলক্ষেত্রে পৌঁছান জোলি। সেখান থেকে নৌকাযোগে জোহি ও সংলগ্ন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন তিনি।
এর আগে ২০০৫ ও ২০১০ সালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে পাকিস্তান সফর করেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তবে এবার ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির জরুরি অপারেশনের অংশ হিসেবে এ সফরে গেছেন তিনি।
হলিউডের এই তারকা অভিনেত্রী পাকিস্তানের জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি সহায়তার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে উদ্ভূত দুর্যোগে মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার মতো বিষয়গুলোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের গুরুত্বের ওপর জোর দেবেন তিনি।
আইআরসি বলছে, অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সফর জলবায়ু সংকটের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে কাজ করা এবং জরুরি সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করবে।
আইআরসি পাকিস্তানের কান্ট্রি ডিরেক্টর শবনম বালোচ বলেন, ‘জলবায়ু সংকট পাকিস্তানের জনজীবন ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য এটি মারাত্মক পরিণতি বয়ে নিয়ে আসছে। এই বন্যার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়বে। জরুরি সহায়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্মিলিত ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রয়োজন।’
এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। পরে স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশটির পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পাকিস্তান সরকার বলছে, এবারের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় দেশটির আনুমানিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এবার বন্যার এমন ভয়ঙ্কর রূপ প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে বলে মনে পাকিস্তান ও জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি কিছু করতে হবে। তার ভাষায়, ‘আজ এটি (বন্যার প্রকোপ) পাকিস্তানে, আগামীকাল আপনি যেখানেই থাকুন না কেন এটি আপনার দেশেও হতে পারে। এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। এর জন্য একটি বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন।’
গত জুন থেকে অতি বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে পাকিস্তান। পানির নিচে তলিয়ে যায় দেশটির এক তৃতীয়াংশ এলাকা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সরকার বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় তিন কোটি ৩০ লাখ মানুষ। আর বন্যায় পাকিস্তানের একাংশকে দেখে ‘সমুদ্রের মতো’ মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তার ভাষায়, ‘যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আপনারা না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। দেখে মনে হচ্ছে পুরোটা একটা সমুদ্র।’