প্রতিষ্ঠানের ভুলের কারণে এক দাখিল পরীক্ষার্থী বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। একইসাথে মোবাইল কোর্টে গুনতে হয়েছে ২০ হাজার টাকা জরিমানাও। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
রোববার দোয়ারাবাজার উপজেলার কলাউড়া দারুসছুন্নাৎ ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা দাখিল কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল ওয়াহাবের পুত্র মো. রুহুল আমিন এবার মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ইসলামপুর ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। মাদরাসার সংশ্লিষ্টরা তার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রে পিতা ও মায়ের নাম ভুল দিয়ে দেন। ইতোমধ্যে পরীক্ষার্থী তিন বিষয়ে পরীক্ষা সম্পন্নও করেছিল।
রোববারের পরীক্ষার পূর্বে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিতও করেছিলেন। কিন্তু যথারীতি রোববার গণিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে আসে এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ পরীক্ষার্থীর বাবা মায়ের নামে মিল না থাকায় বহিষ্কার করেন এবং পরবর্তীতে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও প্রদান করেন।
প্রতিষ্ঠানের ভুল ও দায়সারা কাণ্ডে মাশুল গুনতে হলো ওই অসহায় পরীক্ষার্থীকে। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সোমবার ইসলামপুর দাখিল মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
এদিকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে পরীক্ষার্থী বহিষ্কার ও দন্ডিত হওয়ায় কেরানি ও সুপারের বিচারের দাবিতে সোমবার বিকালে ইসলামপুর দাখিল মাদরাসা সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে সচেতন মহল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান কেরানি আলী আকবর ও সুপারের ভুলের কারণে শিক্ষার্থী পরীক্ষা থেকে বঞ্চিতই হয়নি পেতে হয়েছে শাস্তি। এডমিট কার্ডে শিক্ষার্থীর পিতা মাতার নাম ভুল আসলে কর্তৃপক্ষ তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বলে। তাদের ভুলে আজ ওই অসহায় শিক্ষার্থী পরীক্ষা বঞ্চিত এবং দণ্ড পেতে হয়েছে। আমরা মাদরাসার কেরানি ও সুপারের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল হান্নান, মোক্তার হোসেন, মাওলানা গোলামুর রহমান জিলানী, মাওলানা আবুল হোসেন, আব্দুল কাদির মেম্বার প্রমুখ।
পরীক্ষা কেন্দ্রপ্রধান কলাউড়া দারুসছুন্নাৎ ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কালিমুল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ভুল এবং খামখেয়ালিপনায় এমন ঘটনা ঘটিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের বদনাম করা হয়েছে।
ইসলামপুর দাখিল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক এটিএম সামছুদ্দিন দায়সারা বক্তব্যে বলেন, ‘কেরানির ভুলে এমনটি হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছিলাম সংশোধন করার, কিন্তু বোর্ডে গিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি। আমি অনেক চেষ্টা করেছি।’
ইসলামপুর দাখিল মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম মাস্টার বলেন, এ বিষয়টি অবগত হওয়ার পর সুপারিন্টেন্ডেন্টকে বোর্ডে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছেন। গতকাল পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও দন্ডিত করার বিষয়ে এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সুপারিন্টেন্ডেন্ট কে শোকজ করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ মুর্শেদ মিশু জানান, ‘তার এডমিট কার্ডে ভুলের বিষয়টি আগের দিন আমাকে অবহিত করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ড থেকে সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রে থাকা সংশ্লিষ্টদের কাছে তার বাবা, মায়ের নাম মিল না থাকায় পরীক্ষার্থী ভুয়া মনে হয়েছে তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, এমন খামখেয়ালিপনায় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।