দোয়ারাবাজারে সুরমা নদীর ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পে চলছে দায়সারা কাজ। ২০২১ সাল থেকে সুরমা নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এখনও শেষ হয়নি জিও ব্যাগ ও ব্লক বসানোর কাজ। যেসব জায়গায় ব্লক বসানো হয়েছে সেগুলোও ধ্বসে যাচ্ছে প্রকল্প শেষ হবার আগেই।
কাজ চলমান থাকলেও মাঠে দেখা যায় না পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে, অভিযোগ ভাঙন কবলিত বাসিন্দাদের।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা মনগড়া কাজ করেই দায়সারছেন। ভাঙনের স্থানে গভীরে কোনো জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। নিকটবর্তী সামান্য কিছু ব্লক ফেলা হয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় বালুর বস্তা ফেলার কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। প্রকল্পে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কথা ও কাজের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর তাই স্থানীয় সচেতন মহল বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের ৭ ও ৮ নম্বর পিআইসির কাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়, মুরাদপুর, মাছিমপুর, মাঝের গাঁও খোদ উপজেলা পরিষদের সামনে জিও ব্যাগ, ব্লক বসানোর পর ব্লকের নিচে ৪ ইঞ্চি ইটের খোয়া এবং বালি ফেলা হচ্ছে না। কাজের শিডিউল বহির্ভূত যত্রতত্র জিও ব্যাগ ফেলার কারণে এবং ব্লক বসানোর পূর্বে অধিকাংশ স্থানে ইটের খোয়া এবং পরিমাণমত বালির ঢালাই না দেওয়ায় ব্লক বসানোর কিছুদিনের মধ্যে বড় বড় ফাটল দিয়ে উপর থেকে নিচের দিকে দেবে যাচ্ছে। বেশ কিছু স্থানে ব্লক ধ্বসে পানিতে ডুবে যাচ্ছে। নদীর গভীর থেকে পাড় পর্যন্ত ব্লক বসানোর যে প্রাক্কলন রয়েছে তা না করে দেখাগেছে বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন রকম কাজ করা হয়েছে। ব্লক ঢালাই এবং কাজের গুণগত মান সঠিক না থাকায় বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়ে নতুন করে পাড় ধ্বসে পড়ছে।
তবে কাজের শুরু থেকে ব্যাপক অনিয়ম হলেও যেন দেখার কেউ নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজে অনিয়মের কথা বললেও সংশ্লিষ্টরা কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।
মাজেরগাঁও গ্রামের বীর মুক্তযোদ্ধা নুরুল ইসলাম জানান, কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম হচ্ছে। কোন অংশেই পরিমাণ মত জিও ব্যাগ দেয়া হয়নি, এর কারণে নদীরপানি কমার সাথে সাথে বেশ কয়েক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় ব্লক দেবে যাচ্ছে। কাজের শুরু থেকেই গভীর অংশে জিও ব্যাগ দেয়ার জন্য অনেক বার আন্দোলন করেছি, তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের কোন কর্ণপাত করেনি।
তিনি বলেন, গত বছর দেখেছি নদীর ওপারে স্থানীয় লোকজন হাজার হাজার বালু ভর্তী বস্তা চর থেকে বলু ফেলে বস্তা খালি করে নিয়া গেছে।
উপজেলা সদরের মুরাদপুর গ্রামের নদী ভাঙন কবলিত পরিবারের সদস্য ও বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাবিবুর রহমান বলেছেন, আমাদের পুরো গ্রামই নদী ভাঙন কবলিত। কাজের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা দায়সারা কাজ করে যাচ্ছেন। ব্লক বসানোর কাজ চলমান থাকা অবস্থায় প্রাক্কলন অনুযায়ী বালি ও ইটের খোয়া না বসানোর ফলে নীচের মাটি ধ্বসে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। উপরের অংশে নতুন করে ফাটল তৈরী হচ্ছে। এছাড়া কাজের প্রাক্কলন অনুযায়ী অনেক জায়গায়ই ব্লক বসানোর পরিমাপ সঠিক মনে হচ্ছে না। একেক জায়গায় একেক রকম দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টদের বলে কয়ে কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
৮ নম্বর পিআইসির ঠিকাদার প্রতিনিধি আঞ্জু বলেছেন, কাজ চলমান রয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তা ঠিক করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ দোয়ারাবাজার (পওর) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অ: দা:) শমসের আলী মন্টু জানান, কয়েকটি পিআইসিতে ব্লক ধ্বসে যাওয়ার বিষয়ে অবগত আছি। কাজ চলমান রয়েছে। কোথাও সমস্যা হলে ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করা হবে।