সিলেটে ওসমানীনগরে দয়ামীরস্থ মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর এখন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ ওসমানী গ্রন্থগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি অযত্ন ও অবহেলা পড়ে থাকায় ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নস্ট হচ্ছে ফ্লোর। ভেঙে যাচ্ছে গেইট ও জানালাগুলো। একইসাথে গ্রন্থাগারের আসবাবপত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, অযত্ন-অবহেলার সুযোগে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি ভবনের সামনের স্থান দখল করে ব্যবহার করছে এবং বখাটেদের আড্ডা ও অসামাজিক কার্যকলাপের স্থানে পরিণত হয়ে পড়েছে ওসমানীর স্মৃতি রক্ষায় স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানটি। এমন বাস্তবতায় বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানীর প্রতি অসম্মান ও অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সুধীজনেরা।
জানা গেছে, সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের দয়ামীর গ্রামে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিগত ২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মঈন উদ্দিন ইউ আহমদ এনডিসি পিএসসি মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী গ্রন্থগার ও স্মৃতি জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেট জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় গ্রন্থগার ও স্মৃতি জাদুঘরের ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।
২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানীর স্মৃতি রক্ষার্থে ‘ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ এর উদ্বোধন করেন।
বঙ্গবীর এমএজি ওসমানীর নিজ গ্রাম ও পৈতৃক নিবাস দয়ামীরে ‘ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের এক তলাবিশিষ্ট আধুনিক স্থাপনাটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম পাশে, দয়ামীর ডিগ্রি কলেজ, ছদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, আব্দুস সোবহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দয়ামীর মাদরাসার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ভবনটিতে বিশাল লাইব্রেরি কক্ষ, কেয়ারটেকার কক্ষ, ওয়েটিং কক্ষসহ ৫টি কক্ষ ও দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক বাথরুম রয়েছে।
উদ্বোধনের পর থেকেই জাদুঘর সম্পর্কে লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও চালু না হওয়ার কারণে জনমনে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জাদুঘরটি একনজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এলেও নিরাশ হয়ে তাদের চলে যেতে হয়। কয়েক কোটি টাকার সম্পদ বঙ্গবীর ওসমানী গ্রন্থগার ও স্মৃতি জাদুঘর এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অত্র এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ জ্ঞান পিপাসুগণ।
ইতিপূর্বে সিলেট জেলা পরিষদের প্রথম প্রশাসক মরহুম আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের কাছে আবেদন করলে তিনি রাস্তা, গেইট নির্মাণ সহ সৌন্দর্য বর্ধন, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের বসার জন্য ৫টি স্টিলের বেঞ্চ ও ২টি স্টিলের দরজা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। ফলে ভবনের আঙ্গিনাটি একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়। তৎকালীন বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে একটি পরিচালনা কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন তিনি। ঠিক সেই সময় ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম শুরু হলে উক্ত কমিটি আর গঠিত হয়নি।
ফলে অযত্ন ও অবহেলা পড়ে থাকায় ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল সহ ফ্লোর নস্ট হচ্ছে এবং গেইট ও জানালাগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ্রন্থাগারের আসবাবপত্রগুলো। তাছাড়া বখাটেদের আড্ডা ও অসামাজিক কার্যকলাপের স্থানে পরিণত হয়েছে প্রাণের এ প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্তসহ নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।
এদিকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর চালু ও সংস্কার এবং অবৈধ দখলদারদের বালু-পাথর, খড়-কুটা অপসারণের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদ, সিলেট।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খাঁনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করছেন বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদের সিলেটের সভাপতি সৈয়ীদ আহমদ বহলুল ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ জুয়েলসহ নেতৃবৃন্দ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদের সিলেটের সহ-সভাপতি এডভোকটে আব্দুল মালিক, সদস্য আমীন তাহমিদ, কয়েছ আহমদ সাগর, এডভোকেট খন্দকার রানা, সাংবাদিক বায়েজীদ আহমদ প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ জরুরী ভিত্তিতে ওসমানী গ্রন্থগার ও স্মৃতি জাদুঘর এর কার্যক্রম চালু ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল জনগণের মধ্যে তুলে ধরতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দাবী জানিয়েছেন।