সিলেটে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ইজিবাইকে কেন বিশেষ ছাড়!

ছবি : মিঠু দাস জয়

বিদ্যুতের সাশ্রয়ে সিডিউল মেনে লোডশেডিং, রাত ৮টার পর শপিংমল দোকানপাট বন্ধ- এটি এখন নিয়ম। কিন্তু কোন নিয়মেরই যেন আওতাভুক্ত নয় বিদ্যুৎখেকো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক। সিলেট নগরের অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়ায় এসব বাহন। সকল ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকলেও বিদ্যুৎখেকো এই বাহনটির ক্ষেত্রে যেন বিশেষ ছাড়!

এমনকি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুতখেকো, ঝুঁকিপূর্ণ এসব ইজিবাইক বন্ধ থাকার কথা থাকলেও খোদ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানার সামনেই স্ট্যান্ড করে চলছে যাত্রী বহন। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক। নগরীর অলিগলি, সবখানেই যেন অটোরিকশা-ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য।

কোথাও কোথাও শিশু-কিশোরদেরও চালাতে দেখা যায় এসব বাহন। এমনকি অধিকাংশ চালকই অদক্ষ থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটলেও যেন দায় নিচ্ছে না কেউ।

তবে, মাঝে মাঝে সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে অটোরিকশা-ইজিবাইকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলেও শেষমেশ পূর্বের ন্যায় চলে এসব বাহন।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, অন্তত ১০ হাজার অটোরিকশা-ইজিবাক চলাচল করে সিলেট নগরির ভেতরই। আর গ্রামেগঞ্জে এর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।

সংশ্লিষ্টদের মতে একটি ইজিবাইক চার্জে খরচ হয় প্রায় ৬ ইউনিট বিদ্যুৎ। সে হিসেবে সিলেটের জন্য দৈনিক বরাদ্দকৃত বিদ্যুতের একটি বড় অংশই চলে যায় এসব বাহনের চার্জে।

আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ‘একটি ইজিবাইক একবার চার্যে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় তা দিয়ে একটি ছোট পরিবার অনায়াসেই চলতে পারবে।

এমন অবস্থায় বিদ্যুতের সাশ্রয়ে ইজিবাইক-অটোরিকশা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষুব্দ সচেতন মহল।

সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী এসব বাহন বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ মন্তব্য করে প্রশ্ন তোলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে যেখানে এসব বাহন বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে সেখানে এসব ইজিবাইক প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে চলাচল করে কিভাবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কালকের মধ্যেই সিলেটে এসব বাহন বন্ধে প্রশাসনের অভিযান দেখতে চাই।’ এমনকি, এই বাহনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে এর আমদানি বন্ধ করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে এসব বাহন বন্ধ করতে হলে আগে পুনর্বাসন চান শ্রমিকরা। বিগত তিন বছর থেকে ইজিবাইক চালান সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকার কাওসার মিয়া। নিষিদ্ধ এ বাহনটি চালানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি এটি বন্ধ হয় তাহলে আমাদের চুরি করতে হবে। এটি না চালালে খাবো কি। অন্যথায় সরকার আমাদের কিছু করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিক।’

নিষিদ্ধ বাহনটির চার্জের জন্য গ্যারেজে বিদ্যুৎসংযোগ অনুমোদন দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সিলেটে এরকম অন্তত ৩০০ বৈধ চার্জিং সংযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আর শ্রমিক ও সচেতন মহলের চাহিদা যখন দ্বিমুখী তখন বিদ্যুৎ বিভাগ জানালো অবাক করা তথ্য। সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে নিষিদ্ধ এ বাহনটির ব্যাটারি চার্জের জন্য সিলেটজুড়ে অন্তত ৩০০ সংযোগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির বলেন, ‘জাতীয়ভাবে এসব ইজিবাইক-অটোরিকশা চার্জিং সংযোগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এজন্য আমাদের সিলেটেও আমরা দিয়েছি। এখন যদি এসব বন্ধে জাতীয়ভাবে কোন নির্দেশনা আসে তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’

আর জেলা প্রশাসন বলছে, নির্দেশনার অভাবে নেয়া যাচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। বিদ্যুৎতের সাশ্রয়ে রাত ৮ টার পর জেলা প্রশাসন দোকানপাট বন্ধে অভিযান চালালেও বিদ্যুৎখেকো এসব ইজিবাইক বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

কেন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না; এমন প্রশ্নে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। আমরা নজেরাও বিদ্যুতের সাশ্রয়ে সচেতন, সিলেটের মানুষও সচেতন। কিন্তু অটোরিকশা-ইজিবাইক এগুলো কেবল সিলেটের সমস্যা না। সারা দেশের চিত্রই প্রায় এক। তাই জাতীয় ভাবে কোন নির্দেশনা আসলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।’