আষাঢ়ের শেষ দিন আজ। কিন্তু আবহাওয়া মনে করিয়ে দিচ্ছে চৈত্রকে। প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী। তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা জুলাই মাসে গত ৬৬ বছরের রেকর্ড।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ১৯৫৬ সালের পর গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সিলেটে তাপমাত্রা ৩৮.৯ ডিগ্রিতে পৌঁছায়।
এদিকে গরমের তীব্রতার কারণে সিলেটে বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বিক্রি। নগরীতে একদিনে ৩০টি নতুন এসি লাগিয়েছেন এক টেকনিশিয়ান। এ বছরে এটাই সর্বোচ্চ বলে দাবি করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) পুরো টিম মিলে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে এসব এসি লাগানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন টেকনিশিয়ান সাগর মোহাম্মদ সবুজ।
সবুজ বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) নগরীর হলদারপাড়া, বাগবাড়ি, নবাব রোড, কুমারপাড়া, মিরাবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসাবাড়িতে নতুন এসি লাগানো হয়েছে। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেছি। এতে এক দিনে এসি লাগানোর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০টিতে।
তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার) সকালে প্রথমে নবাব রোড, তারপর বাগবাড়িতে কাজ শেষ করে এখন আম্বরখানার মঈন কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় অবস্থিত মেসার্স আবুল কালাম এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের অফিসে এসি লাগাচ্ছি। এরপর উপশহর, হাতিমবাগ ও লাউয়াইতে এসি লাগাতে হবে। যার মধ্যে হাতিমবাগে ২টি, উপশহর ১টি, লাউয়াই ১টি এসি লাগাতে হবে।
সহকারী টেকনিশিয়ান শিমুল চন্দ্র দেব বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সারাদিনে অন্তত ৩৫টি বাড়িতে গিয়ে আমাদেরকে এসি মেরামতের কাজ করতে হয়েছে। আজও অনেক কাজ আছে। তীব্র গরমের কারণে আমাদের ব্যস্ততাটাও বেড়ে গেছে।
প্রায় ২০ বছর ধরে এসি টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত সাগর মোহাম্মদ সবুজের মতে, মার্চ-এপ্রিল থেকে আমাদের কাজের ব্যস্ততা শুরু হয়। এ সময় প্রতিদিন ২/৩টা এসি লাগানোর অর্ডার থাকাটা স্বাভাবিক। বলা যায় এটা রেগুলার অর্ডার। তবে গরম বাড়ার সাথে সাথে কাজের চাপ বাড়তে থাকে। যেমনটি গতকাল হয়েছে। সোবহানীঘাট মেট্রোপলিটন মার্কেটের তুহিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আওতাধীন আমরা প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের একটি টিম সিলেট নগরীতে নতুন এসি লাগানো ও মেরামতের কাজ করে থাকি। পুরো টিম মিলেই বৃহস্পতিবার নগরীতে মোট ৩০টি এসি লাগিয়েছি।
এদিকে আজ শুক্রবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকেই সিলেটে ছিল কড়া রোদ। নগরীর শাহী ঈদগাহ, কাজিটুলা ও আম্বরখানা এলাকা ঘুরে দেখা যায় রোদে বাইরে থাকা শ্রমজীবী মানুষের চরম দুর্ভোগ। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। শিশু, মধ্যবয়স্ক, বৃদ্ধ সবাই তৃষ্ণার্ত। অনেকে ডাবের দোকানে ভিড় করে ডাব কিনছেন।
এই রেকর্ড তাপমাত্রায় হাঁসফাঁস দশায় পড়েছেন মানুষ। নগর ছাড়িয়ে গ্রাম, সর্বত্র গরমের তীব্রতায় ভুগছে মানুষ। দিনে-রাতে সমানতালে চলছে গরমের দাপট। এর মধ্যে কষ্টের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে লোডশেডিং।
ব্যাপক গরমে বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, হকারসহ কর্মজীবীরা। নগরীর আম্বরখানা এলাকায় এক বৃদ্ধ রিকশাচালক বলেন, এই গরমে রিকশা টানা যায় না। নিরুপায় হয়ে রিকশা চালাতে হচ্ছে।
এদিকে অস্বাভাবিক তাপদাহের কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে ঘরে ঘরে অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে বাড়ছে রোগীর ভিড়।
তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই দিনের বেলা ছাতাসহ বাইরে বের হওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে কদিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহের কারণেই এমন গরম অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃষ্টির অপেক্ষা আরও দুই-একদিন করতে হতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ থাকতে পারে আরও দুই-তিনদিন।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ১৬-১৭ জুলাই পর্যন্ত পরিস্থিতি এমনই থাকতে পারে। মাঝে মাঝে কোথাও হালকা বৃষ্টি হলেও গরম খুব একটা কমবে না। গরম কমতে হলে টানা বৃষ্টি হতে হবে। ১৭ বা ১৮ জুলাইয়ের পর বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, তাপমাত্রা এখন গড়ে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আছে। মৌসুমি বায়ুর কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। গরমে ঘেমে গেলেও ঘাম শুকাচ্ছে না। ফলে ভ্যাপসা একটা ভাব তৈরি হচ্ছে। এ কারণে যতটুকু তাপমাত্রা বেড়েছে তার চেয়ে বেশি তাপ অনুভূত হচ্ছে।