বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের বরফের মজুত হারিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক জলবায়ু গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রায়োসফিয়ার ক্লাইমেট ইনিশিয়য়েটিভ রিসার্চ নেটওয়ার্ক মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।
একই কারণে এই সময়সীমার মধ্যে দক্ষিণ মেরু বা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমাট বরফ গলে যাবে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছর মার্চে অ্যান্টার্কটিকার উত্তরাংশে বৃষ্টিপাত হয়েছে। মার্চ মাসে অ্যান্টার্কটিকায় বৃষ্টি খুবই বিরল ঘটনা।’
এছাড়া ইউরোপের আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের জমাট বরফের স্তুপের ৫ শতাংশ চলতি বছর গ্রীষ্মে গলে গেছে বলেও জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রায়োসফিয়ার ক্লাইমেট ইনিশিয়য়েটিভ রিসার্চ নেটওয়ার্ক।
ভৌগলিক গঠন অনুযায়ী পৃথিবীর তিন ভাগ পানি এবং এক ভাগ স্থলভূমি। মোট পানির এই মজুতের শতকরা ৯৭ শতাংশ সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি, ২ শতাংশ বরফ, এবং মাত্র ১ শতাংশ পানযোগ্য স্বাদু পানি।
যদি বরফের মজুত গলতে থাকে, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই সমুদ্রের উচ্চতা বাড়বে এবং উপকূলবর্তী বেশিরভাগ অঞ্চল সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।
জাতিসংঘের চলতি বছর প্রকাশিত জলবায়ু প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ব্যাপকহারে বাড়ছে উষ্ণতা এবং চলতি ২০২২ সালে পৃথিবী তার ইতিহাসের উষ্ণতম অষ্টম বছর পার করছে। দীর্ঘসময়জুড়ে টানা এই উষ্ণতার প্রভাবে এই গ্রহের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমাট বরফের মজুত হারিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।
আগামী ১৮ নভেম্বর মিশরে শুরু হবে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৭। তার কয়েক দিন আগেই এ বিষয়টির ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করল ক্রায়োসফিয়ার ক্লাইমেট ইনিশিয়য়েটিভ রিসার্চ নেটওয়ার্ক।
সংস্থার একজন গবেষক এবং প্রতিবেদনের সহলেখক রবি ম্যালেট বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়বে অন্তত দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু তার আগেই উত্তর মেরুর সাগর থেকে গ্রীষ্মকালীণ বরফের স্তুপ হারিয়ে যাবে। আমরা যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিতে পারি, তাহলে এই বরফের মজুত হারিয়ে যাওয়াও আমরা ঠেকাতে পারব না।