সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আব্দুল হানিফ কুটু নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
শনিবার (১৭ জুন) নগরীর টিলাগড়রস্থ নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
আব্দুল হানিফ কুটু ১৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে বলেন, ‘নগরবাসীর সহযোগিতা ও পরামর্শে আমি এই নগরকে জলাবদ্ধতা ও দুর্নীতিমুক্ত একটি স্মার্ট, জনবান্ধব নগর হিসেবে গড়তে চাই।’
আব্দুল হানিফ কুটু তার নির্বাচনী ইশতেহারে নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ও সৌন্দর্য্যবর্ধনকে অগ্রাধিকার দেন। পর্যায়ক্রমে তিনি নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও মশক নিধন, বিশুদ্ধ পানীয় ও জল নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাসস্থান, খেলাধুলা ও বিনোদন, ট্রাফিক ও যানজট নিরসন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সবুজায়ন, কর্মসংস্থান, স্মার্ট নগরীর নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যম কর্মীদের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
আরও পড়ুন : গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট সিলেটের অঙ্গীকার আনোয়ারুজ্জামানের
নির্বাচনী ইশতেহার পেশকালে প্রথমেই তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিজীবন তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সিলেট নগরীর টিলাগড়ের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। সিলেট নগরবাসীর সাথে আমার সুখ-দুঃখ জড়িত। আমি ১৯৮৬ সালে সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি) থেকে এইচএসসি পাশ করি। তার পূর্বে আমি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হই।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার প্রচারণায় দুটি মাইক ব্যবহৃত হলে আমাকে জরিমানা করা হয় কিন্তু অন্যান্য প্রার্থীরা বিশেষ করে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা বার বার আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সিসিক নির্বাচনে অন্যান্য প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন নির্দেশিত নির্দেশনা মানছেন না। তারা অহরহ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। আমি ১০ জুন নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি আমলে নেন এবং ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আঞ্চলিক রিটার্নিং অফিসারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত কার্যকর হচ্ছে না।’
কুটু বলেন, ‘নির্বাচনে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে। তবে আমি যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাঠ ত্যাগ করবো না। আমি রাজনীতি করতে গিয়ে বার বার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কিন্তু আমার আদর্শ থেকে পিছপা হইনি। সিলেটের উন্নয়নসহ যেকোনো দাবি আদায়ের আন্দোলনে নগরবাসীর পাশে ছিলাম, পাশেই থাকবো।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে কুটু বলেন, ‘তিনি তার নির্বাচনী হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতায় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন বি.এ (সম্মান) পাশ। তিনি কোন কলেজ থেকে ইন্টার এবং সম্মান পাশ করেছেন? আমার জানামতে তিনি কুমিল্লা থেকে এসএসসি পাশ করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। এসব যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হলেও রহস্যজনক কারণে তা হয়নি।’
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তার নৈতিক স্খলনজনিত বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হলেও তার বিরুদ্ধেও নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটের মাঠে-ময়দানে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনীতি করছেন তারা আজ বঞ্চিত, অবহেলিত। সিলেটের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য এবং মাঠের নেতাকর্মীদের মূল্যায়নে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ‘ঘোড়া প্রতীকে’ মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।’
আব্দুল হানিফ কুটু বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় আমি নির্বাচিত হলে এই সিটিকে তার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার সমন্বয়ে বিশ্বমানের বাসযোগ্য একটি নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মো. দিলওয়ার হোসেন, মো. নূরুল হক, মো. এনামুল হক, তারেক আহমদ, আবুল খায়ের, মুসা রেজা চৌধুরী, হুমায়ূন মজিদ টিটু, সামছুল আহমদ, আব্দুল হামিদ জৌলুস চৌধুরী প্রমুখ।