একটা সময় অধিনায়কদের তীর্যক সমালোচনায় বিদ্ধ হতেন বোলাররা! অধিনায়কদের অভিযোগ ছিল, টেস্ট জিততে হলে বোলারাদের ২০ উইকেট নিতে হয়, বাংলাদেশের বোলাররা সেই কাজটিই করতে পারতেন না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বোলারদের উন্নতি হলেও হয়নি ব্যাটারদের। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটাররা হয়ে গেছেন ‘টপলেস’ ব্যাটার। তাদের ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ হচ্ছে না। যার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো দলকে। এই যেমন অ্যান্টিগা টেস্টে হতাশা উপহার দেওয়ার পেছনে ভূমিকা টপ অর্ডার ব্যাটারদের! অথচ তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে খালেদের দারুন বোলিংয়ে আফসোস বেড়েছে, ইশ স্কোরবোর্ডে যদি আরও কিছু রান থাকতো!
মাত্র ৮৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯ রানেই স্বাগতিকরা টপ অর্ডার তিন ব্যাটারকে হারায়। খালেদ আহমেদ পর পর দুই ওভারে তুলে নেন তিনটি উইকেট। কিন্তু স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান না থাকায় বোলারদের এই লড়াইটা বৃথাই গেছে বলা চলে! খালেদ তার প্রথম ওভারেই তুলে নেন প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা অধিনায়ক ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটকে (১)। চার বল পরই খালেদের দ্বিতীয় শিকার রেমন রেইফার (২)। পরের ওভারের পঞ্চম বলে খালেদ তুলে নেন প্রথম ইনিংসে ৩৩ রান করা এনক্রুমা বনারকে (০)। দিনের বাকি সময়টুকু অবশ্য অনায়াসেই পেরিয়ে গেছেন জন ক্যাম্পবেল (২৮) ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড (১৭)। জয় থেকে মাত্র ৩৫ রান দূরে স্বাগতিকরা, হাতে আছে ৭ উইকেট। অথচ স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান থাকলে অ্যান্টিগা টেস্ট হতে পারতো বাংলাদেশের!
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৬ ব্যাটার রানের খাতা না খুলেই আউট হন, আর তাতেই মাত্র ১০৩ রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যর্থতাই টেস্টের ভাগ্য লেখা হয়ে যায়। মিরাজ-এবাদত-খালেদদের দারুন পারফরম্যান্সে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা ২৬৫ রানে অলআউট হয়। ১৬২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ফিরে গেলেন পুরনো গল্পেই। মাহমুদুল হাসান জয় কিছুটা লড়াই করলেও বাকি ব্যাটারা হতাশাই উপহার দিয়েছেন। তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, লিটন দাসদের কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।
অথচ প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা কাটিয়ে দলের টপ অর্ডার যদি দ্বিতীয় ইনিংসে কামব্যাক করতে পারতেন তাহলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ থাকতো বাংলাদেশের হাতেই! আগের দিন ৫০ রান নিয়ে দুই ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয় মাঠ ছাড়েন। এই দুই ব্যাটারের কাছে প্রত্যাশা ছিল তৃতীয় দিনের সকালটুকু নির্বিঘ্নে পাড় করার। কিন্তু প্রথম ঘণ্টাতেই চলে যান শান্ত, ১৭ রান করে। প্রত্যাশা ছিল সাম্প্রতিক সময়ের ব্যর্থতা কাটিয়ে নিজেকে মেলে ধরবেন মুমিনুল। কিন্তু প্রথম ইনিংসের শূন্যর পর, এবার তার ব্যাট থেকে আসল ৪ রান। তার আউটের ধরণ দেখে মনে হবে যেন রান করাই ভুলে গেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।
মুমিনুলের বিদায়ের পর কিছুটা আক্রমণাত্মক মুডেই খেলছিলেন লিটন দাস। ১৫ বলে ১৭ রান করে রোচের ওয়াইড লেন্থের বল অফে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় প্রথম স্লিপে। লিটনের ফেরার পর ১০০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে অথৈ সাগরে বাংলাদেশ। দলীয় ৯ রান যোগ হতেই দলের বিপদ আর বাড়িয়ে দেন জয়। রোচের ব্যাক অব লেন্থের আউটসাইড অফের বল খোঁচা মেরে লড়াকু ইনিংসের মৃত্যু ঘটান তিনি। ১৫৩ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৪২ রানের ইনিংস।
ইনিংস হারের শঙ্কাতে পড়া দলটাকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয় মূলত সপ্তম উইকেট জুটি। ২২১ বলে সাকিব-সোহানের ১২৩ রানের জুটির কারণেই ইনিংস হারের যে কালো মেঘ জমেছিল, সেটি দূর হয়েছে। পুরো একটা সেশন এই দুই ব্যাটার মিলে অনায়াসেই পার করে দেন। দিনের দ্বিতীয় সেশনে ২৭ ওভারে ৩.৫২ গড়ে তারা রান তোলেন ৯৫। পুরনো বলে বেশ স্বাচ্ছন্দেই খেলছিলেন সাকিব-সোহান।
কিন্তু দ্বিতীয় দফায় নতুন বল নিতেই খেই হারান সাকিব। নতুন বলের তৃতীয় ওভারে রোচের ফুলার লেন্থের হালকা বাউন্স করা বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে এক্সট্রা কাভারে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু ওখানে দাঁড়ানো ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ফাঁকি দিতে পারেনি সাকিব। ৯৯ বলে ৬৩ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি। সাকিব ফেরার কিছুক্ষণ পর এবাদতকে সঙ্গে নিয়ে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলেন সোহান। কিন্তু রোচের ব্যাক অব লেন্থের বল সোহানের ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো জোশুয়া সিলভার গ্লাভসে। তাতে ১৪৭ বলে ১১ চারে ৬৪ রানে থামতে হয় সোহানকে। সোহানের বিদায়ের পর মোস্তাফিজের এক ছক্কায় ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে ৮৪ রানের লক্ষ্য দিতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু সামান্য এই রান স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াই করার মতো নয়। ফলে আরও একটি ম্যাচ হারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ!