মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলার বিতর্কিত প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্ট ফোন কিনে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি।
মোবাইল বিক্রেতা জানান, এটিই কুলাউড়ায় বিক্রিত এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ দামের মোবাইল ফোন। গত ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার তিনি কুলাউড়ার সর্ববৃহৎ বিপনী বিতানের একটি টেলিকম দোকান থেকে স্যামসং আলট্রা ২২ মডেলের মোবাইলটি কেনেন।
ওই দোকানের সত্ত্বাধিকারী নিজের দোকানের ফেসবুক একাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করেন। এরপর নেট দুনিয়ায় এটি ভাইরাল হয়।
নেটিজেনরা তার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চান। সবার একটাই প্রশ্ন একজন সরকারি কর্মকর্তার বেতন কত আর ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের ফোন তিনি কিভাবে কিনলেন? অনেকেই এই টাকার উৎস কোথায় থেকে এসেছে সেটা জানতে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন।
এর আগে ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাকে অপসারণের জন্য উপজেলার ১৩ ইউপি চেয়ারম্যান ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত কাজে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন হয়রানীর প্রতিকার চেয়ে প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে ওই প্রকৌশলীকে অপসারণের দাবি জানান তারা।
এদিকে কুলাউড়ায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে তার একাউন্ট চালু রয়েছে। তিনি ওই একাউন্টের মাধ্যমে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষের প্রাপ্ত টাকা ক্যাশ ডিপোজিট হিসেবে নেন।
এর আগে গেল ২৪ জুলাই উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান ও ইউএনও মাহমুদুর রহমান খোন্দকারের উপস্থিতিতে এলজিইডি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিলে কয়েকজন চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
এসময় উপজেলার কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান ও ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বক্তব্যে প্রকৌশলীকে ‘ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা’ বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে অভিযোগগুলো পরিষদের সাধারণ সভায় রেজুলেশনে নথিভুক্ত করে তাকে জরুরী ভিত্তিতে উপজেলা থেকে প্রত্যাহারের চেয়ে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করার জন্য পরিষদের সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে শনিবার একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোনটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘একজন প্রকৌশলী এত টাকা দাম দিয়ে ফোন ক্রয় করেছেন সেটা শুনে খুবই আশ্চর্য্য হলাম। ১০ হাজার টাকা দিয়ে ফোন কিনতে গেলেও আমাদের মাথা ঘুরায়। বিষয়টি আমি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।’
এদিকে ১৩ ইউপি চেয়ারম্যানের করা আগের অভিযোগের বিষয়ে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই সময় তাৎক্ষণিক বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিল। সেখানকার পরিস্থিতি সুন্দর ও শান্ত রাখতে ওই প্রকৌশলীকে কুলাউড়া থেকে বদলী করার জন্য প্রধান প্রকৌশলী মহোদয়কে বলেছিলাম। তবে স্থানীয়ভাবে তাঁর পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রুপ রয়েছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য এলজিইডি’র প্রধান কার্যালয়ের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা খুব শীঘ্রই সরেজমিন এসে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নির্মল কুমার বিশ্বাস শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এত টাকা দাম দিয়ে ফোন কেনার বিষয়টি সত্য হলে বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান জানান, উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের করা অভিযোগের বিষয়টি গত ২৪ জুলাই পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ওই সভায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহের কোন সদুত্তোর না পাওয়ায় অভিযোগগুলো রেজুলেশনে নথিভুক্ত করে তাকে জরুরি ভিত্তিতে উপজেলা থেকে প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
৭ আগস্ট অভিযোগের কপিসহ পরিষদের সাধারণ সভার রেজুলেশনটি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীসহ এলজিইডি’র বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।