জীবিত থেকেও মৃত, ফাঁসছেন ইউপি সদস্য ও দুই শিক্ষক!

সিলেটের জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভরণ সুলতানপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গণির পুত্র সিরাজ উদ্দিন গত স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে দেখেন ভোটার তালিকায় তার নাম নাই! একই গ্রামের মৃত হবিব আলীর স্ত্রী মোছা: আম্বুলা বেগমও ভোট দিতে পারেননি তালিকায় নাম না থাকায়!

এমন বাস্তবতায় নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন তাদেরকে মৃত ঘোষণা করে তালিকা হতে নাম কর্তন করা হয়েছে।

ভূক্তভোগী সিরাজ উদ্দিনের ছেলে শাহীন আহমদ এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জকিগঞ্জে তথ্য সংগ্রহকারী ভরন সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহসিনা জান্নাত শিপা, সনাক্তকারী সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য রিয়াজ উদ্দিন ও সুপারভাইজার রহিমখাঁর চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহমুদুল হাসান খানকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার বাদী শাহীন জানান, বিগত নির্বাচনে ইউপি সদস্য রিয়াজ উদ্দিনকে সমর্থন না করায় তিনি পরিকল্পিতভাবে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে বিগত ২৬/১১/২০২১ খ্রি. তারিখের হালনাগাদ ভোটার তালিকা হইতে বাদ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার পিতা বিগত ১০/০৩/২০১৫ খ্রি. তারিখ মৃত্যুবরণ করেছেন মর্মে ভোটার তালিকা হইতে নাম কর্তনের জন্য আমার জাল স্বাক্ষর প্রদান করিয়া আবেদনকারী দেখিয়েছেন।’

বয়োবৃদ্ধ আম্বুলা বেগম জানান, ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন করায় রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছি। ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হওয়ার জন্য এই বৃদ্ধ বয়সে এসে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।

জকিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আফতাব হোসেন জানান, সিরাজ উদ্দিন ও আম্বুলা বেগম জীবিত থাকা অবস্থায় ভোটার তালিকায় মৃত ঘোষণা দুঃখজনক। তারা উভয়ই জীবিত হিসাবে বসবাস করছেন। তথ্য সংগ্রহকারী তাহসিনা জান্নাত শিপা বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহকারী ২২টি ফরম আমাকে দেয়। আমি ৬/৭টি চেক করে সঠিক পাওয়ায় সবকটিতে স্বাক্ষর দিয়ে দেই। ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে স্বাক্ষর করতে বলায় আমি সরল বিশ্বাসে স্বাক্ষর দিয়েছি। জীবিত ব্যক্তিদের মৃত বলে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’

ভোটার তথ্য হালনাগাদের সুপারভাইজার প্রধান শিক্ষক মো. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, ‘আমাদের নিদের্শনা থাকে শতকরা ১০টি যাচাই বাছাই করার। এটা ভুল বসতঃ এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা এটা সংশোধনের ব্যবস্থা নিব।’

উপজেলা নির্বাচন অফিসার তপন চন্দ্র শীল জানান, জীবিত থেকেও তাদের মৃত ঘোষণা করে ভোটার তালিকায় নাম কর্তনের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।