আজ রোববার (৩০ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। সিলেটে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৬ হাজারের বেশি।
সিলেট শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। পরিস্থিতি যখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়, তখন সিলেবাস কমিয়ে এসব পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় অধিকাংশ অনিয়মিত ও ফেল করা পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়। যার ফলে গতবারের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে।
সিলেট বিভাগ থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৯৩১টি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ১০ হাজার ৪০২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪৫ হাজার ৫৯৮ জন ছাত্র এবং ৬৪ হাজার ৮০৪ জন ছাত্রী। এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৬ হাজার ১৮৬ জন কমেছে।
গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণ করেছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৯০ জন। এদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ জন।
এবার বিভাগের ১৮৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। সিলেটে ৫৯, হবিগঞ্জে ৩১, মৌলভীবাজারে ২৬ এবং সুনামগঞ্জে ৩৩টি কেন্দ্র রয়েছে। বিভাগের ৯৩১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবার পরীক্ষায় অংশ নেবে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল জানান, সিলেটে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৯ হাজার ৯৩৭ জন, বিজ্ঞান বিভাগে ২৩ হাজার ২২৬ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭ হাজার ১৪১ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এবার সবকটি বিষয়ে তিন ঘণ্টা করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও জানান, গত দুই বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় সিলেটে পাসের হার বেশি ছিল। যেখানে অনিয়মিত ও ফেল করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশি ছিল। তাই চলতি বছর অনিয়মিত-ফেল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকায় সিলেটে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৬ হাজার ১৮৬ জন। তবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
জানা গেছে, এবার সিলেট জেলায় মোট এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪১ হাজার ৩৯৪ জন। যাদের মধ্যে ছেলে ১৭ হাজার ২৬৭ জন ও মেয়ে ২৪ হাজার ১২৭ জন। হবিগঞ্জে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজার ৫২৮ জন। যাদের মধ্যে ছেলে ৮ হাজার ৩৭৫ জন ও মেয়ে ১২ হাজার ৬৫৩ জন। মৌলভীবাজারে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৭১১ জন। যাদের মধ্যে ছেলে ৯ হাজার ৮৩০ জন ও মেয়ে ১৪ হাজার ৮৮১ জন। সুনামগঞ্জ জেলায় মোট এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৬৭১ জন। যাদের মধ্যে ছেলে ১০ হাজার ৮০ জন ও মেয়ে ১৩ হাজার ৫৯১ জন।
এবারের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৭৬ জন। যার মধ্যে ছেলে ৭ হাজার ৯৩২ জন এবং মেয়ে ১০ হাজার ৪৭৪ জন রয়েছেন।
জানা গেছে, পরীক্ষা ঘিরে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সিলেট। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষার কাজ তদারকের জন্য ভিজিল্যান্স টিম ও স্পেশাল ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা :
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৩০ এপ্রিল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার হলে আসন গ্রহণ করতে হবে। কোনো প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা নকল পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসা যাবে না এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্পর্কিত গুজব/রটনা, নকল/অসদুপায় অবলম্বনের কুফল এবং এ কাজে সংশ্লিষ্ট হওয়ার বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন ১৯৮০, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ তে বর্ণিত শাস্তি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
এদিকে আরেকটি চিঠির মাধ্যমে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও জনসাধারণের সচেতনার লক্ষ্যে আরও ৯টি নিদের্শনা দিয়েছে সিলেট শিক্ষাবোর্ড। এগুলো হলো- পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। তাই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নন, এমন কেউ কেন্দ্রের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে পারবেন না।
পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত সবধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। কেন্দ্র সচিব ব্যতিত পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না।
কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন/ইলেট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের নিকট উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ নজরদারি জোরদার করবে।
পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধের জন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে বিটিআরসি প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করবে।
পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রের আশপাশে পরীক্ষা বিঘ্নিত হয় এরূপ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি, সভা, সমাবেশ ইত্যাদির অনুমোদন দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।