সিলেটের বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প শুরু করেছে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সোমবার (২৭ জুন) দিনভর নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আগ্রা কমিউনিটি সেন্টার ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুশিঘাট এলাকার গাজী বুরহান উদ্দিন মাজার সংলগ্ন মাঠে দুটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে ৯ শতাধিক রোগীকে ফ্রি ব্যবস্থাপত্র ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়।
সিলেটের বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ২৫ লক্ষ টাকার তহবিল গঠন করেছে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান হলি সিলেট হোল্ডিং লিমিটেড। এই তহবিলে কলেজ এবং হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের ১ দিনের বেতন উৎসর্গ করা হয়। এই তহবিল থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সোমবার নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আগ্রা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে নেতৃত্ব দেন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহফিম আহমদ রিফাত। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সমাজসেবী সোহেল আহমদ, রফিকুল ইসলাম মজুমদার ও গিয়াস উদ্দিন। উক্ত ক্যাম্পে ৪ শতাধিক রোগীকে ফ্রি ব্যবস্থাপত্র ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়। মেডিকেল ক্যাম্পে ২০ জনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের সাথে হাসপাতালের ১৫ জন নার্স, স্বেচ্ছাসেবক ও ওয়ার্ড বয় দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুশিঘাট এলাকার গাজী বুরহান উদ্দিন (র.) মাজার সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে নেতৃত্ব দেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু শেখর দাস। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল আহমদ রিপন। উক্ত ক্যাম্পে ৫ শতাধিক রোগীকে ফ্রি ব্যবস্থাপত্র ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়। ক্যাম্পে ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি ২০ জন নার্স, স্বেচ্ছাসেবক ও ওয়ার্ড বয় দায়িত্ব পালন করেন।
দুটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শন করেন, হলি সিলেট হোল্ডিং লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়েছ আহমদ চৌধুরী, কোম্পানির পরিচালক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, পরিচালক মোস্তাক আহমদ, মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল এবং স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহানা ফেরদৌস চৌধুরী।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় খাবারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্যার্তদের খাদ্য চাহিদা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সাধ্যের সবটুকু সামর্থ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যার্ত মানুষের সেবায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কিছুটা হলেও বানভাসি মানুষ বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
ইতোমধ্যে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে সিলেটের ৩টি পৃথক স্থানে বন্যাদুর্গৎ মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহিম কায়সারের নেতৃত্বে জালালাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. আল মোহাইমিন ও অধ্যাপক ডা. সুমা সরকারের নেতৃত্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে বন্যাদূর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত এলাকাসমূহে ধারাবাহিকভাবে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।