বাংলা সংগীত, সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার জগতে এক অনন্য নাম সঞ্জীব চৌধুরী। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সঞ্জীব হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স করে আশির দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন সঞ্জীব চৌধুরী। আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি।
তাঁর সৃজনশীল প্রতিভা ও বহুমুখী কর্মযজ্ঞ বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে এবং এখনও কোটি সংগীতপ্রেমীর হৃদয়ে বেঁচে আছেন।
মানুষ হিসেবে সঞ্জীব চৌধুরীর ছিল সম্মোহনী ক্ষমতা, মানুষকে আপন করে নেওয়ার মতো ক্ষমতা। তিনি ভালোবাসতে পারতেন মানুষকে। সবার সঙ্গে তার ছিল দারুণ সখ্য। তিনি যেমন ছিলেন নরম মানুষ, ঠিক ততটাই অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন দলছুট ব্যান্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ‘গাড়ি চলে না’, ‘বলো না তুমি কার’, ‘আমার বন্ধু’, এবং ‘তুমি হাউ মাউ খাউ’- এর মতো অসংখ্য কালজয়ী গানের মাধ্যমে তিনি বাংলা সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তাঁর গানের কথা ও সুর শুধু বিনোদনের মাধ্যম ছিল না বরং সমাজ, প্রেম, মানবতা এবং জীবনের গভীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের মাধ্যমও।
সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন একাধারে কবি, লেখক এবং সাংবাদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়াশোনা শেষে তিনি সাংবাদিকতায় নিজেকে যুক্ত করেন। তাঁর চিন্তা, দর্শন এবং লেখনীতেও ফুটে উঠেছিল গভীর জীবনবোধ।
২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর, মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলার প্রতিটি গানের ভক্তের মনে।
আজ জন্মদিনে গায়ককে স্মরণ করে বিশেষ আয়োজন করছেন তার সতীর্থ ও ভক্তরা। ‘সঞ্জীব উৎসব’ শিরোনামে এবারের আয়োজনটি একটু ব্যতিক্রমভাবেই করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ‘সঞ্জীব উৎসব’। রবিবার বিকেল ৪টায় শুরু হতে যাওয়া এই গানের এই আয়োজনে থাকবে ১৫ জন একক শিল্পী ও ৩ ব্যান্ডের পরিবেশনা। একক শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন জয় শাহরিয়ার, লিমন, লাবিব কামাল গৌরব, আরমীন মূসা, সন্ধি, সালেকিন, রিয়াদ হাসান, সাহস মোস্তাফিজ, সুহৃদ স্বাগত, অর্ঘ্য, রাফসান, পলাশ ও পিজু। পরিবেশনায় ব্যান্ডের তালিকায় আছে বাংলা ফাইভ, কোলস্লো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ।