আজ (২৪ অক্টোবর) সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী আপোষহীন সংগ্রামী নেতা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) সিলেট জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি সিলেট জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব আবু হেনা চৌধুরীর ১৮-তম মৃত্যুবার্ষিকী।
মৃত্যুবার্ষিকী পালনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৮ টায় হযরত শাহজালাল (রহ:) দরগাহ কবরস্থান এর সমাধীস্থলে পুষ্পস্তবক অপর্ণ ও সন্ধ্যা ৬ ঘটিকায় সংগঠনের সুরমা মার্কেটস্থ জেলা কার্যালয়ে আলোচনাসভা।
উল্লেখ্য আবু হেনা চৌধুরী ২৪ অক্টোবর ২০০৬ সালে ভোর রাতে শাসসনালী ও খাদ্যনালী সংক্রমন জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ৬০ এর দশকে রাশিয়াতে ক্রুশ্চেভচক্র ক্ষমতা দখল করার প্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যে বির্তক দেখা দেয় তার ঢেউ বাংলাদেশেও এসে লাগে এবং আলবেনিয়ার নেতৃত্বে সে বির্তকের দুই ধারার আদর্শগত সংগ্রামের পরিণতিতে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন সংশোধনবাদী ও বিপ্লবী ধারায় বিভক্ত হয়। সেই আদর্শগত সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন আবু হেনা চৌধুরী। এ সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের বিপ্লবী ধারার সিলেট জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। মার্কসবাদের কালজয়ী আদর্শকে তাঁর জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করেন। ষাটের দশকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনসহ সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী অসংখ্য আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং কারা বরণ করেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে মসজিদ আল-আকসাতে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে ছাত্র জনতার আন্দোলনসহ অসংখ্য আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। এ সময় হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন তাদের প্রণীত শিক্ষানীতি সর্ম্পকে ছাত্র শিক্ষকের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করলে এম.সি কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আবুহেনা চৌধুরী উক্ত শিক্ষা কমিশনের প্রণীত শিক্ষানীতির বিভিন্ন গণবিরোধী দিক তুলে ধরে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করেন। সেজন্য তৎকালীন এম.সি কলেজের অধ্যক্ষ জনাব সুলেমান চৌদুরী আবু হেনা চৌধুরীকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করেন। সেই বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে আবু হেনা চৌধুরী হাইর্কোটে রিট দায়ের করলে হাইর্কোট তার পক্ষে ডিক্রি প্রদান করেন। এই পর্যায়ে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সম্মুখে সিলেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যুক্তি ও দাবী অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ইংরেজী ভাষায় উত্থাপন করলে তিনি সর্ব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ১৯৭১ সালে উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী জোয়ারের বিরুদ্ধে আবু হেনা চৌধুরী ও তার দল বাংলাদেশের আত্মানিয়ন্ত্রণ এর প্রশ্নকে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী বৃহত্তর সংগ্রামের অংশ ও অধীনস্থ হিসেবে নির্ধারণ করে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করেন।
সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী সংগ্রাম অসমাপ্ত থাকার কারণেই শোষণমূলক বাংলাদেশ আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় আশির দশকে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠিত হলে সিলেট জেলাতেও ১৯৮৮ সনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা শাখা গঠিত হয় এবং তিনি প্রথমে আহবায়ক ও পরর্বতীতে সম্মেলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।