ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম ও পাহাড়ি ঢল কম নামায় সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। শনিবার (২২ জুন) সকাল থেকে কোনও বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে পানি আর বাড়েনি।
গতকাল শুক্রবার (২১ জুন) সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ তা নেমে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে জেলার মানুষদের মনে। তবে নদীর পানি কিছুটা কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের।চ
পানি কমলেও এখনও আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি যেতে পারছে না লোকজন। কারণ পানি নামলেও বাড়ি সড়ক কাদা এবং মেঝে পাকা না হওয়ার কারণে কাদার জন্য বাড়িতে যেতে পারছে না বন্যার্তরা। আরও দুই দিন ভাল করে রোদ ওঠলে কাদা কিছু শুকালে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে জানান সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নেয়া বন্যার্তরা।
এদিকে, বন্যার ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে পানিবন্দি মানুষরা আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও সেখানে গিয়ে তাদের পড়তে হয়েছে নতুন ভোগান্তিতে । আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার অভাব ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বন্যা আক্রান্ত মানুষরা।
তারা জানান, আমরা এখনও সরকারি ভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণের শুকনা খাবার পায়নি। সেই সাথে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেও প্রতিনিয়ত আমাদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।
শহরতলীর সুলতান পুরের বাসিন্দা আক্কাস মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়ির পানি নেমে গেছে সকালে দেখে এসেছি। কিন্তু এখন ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে যেতে পারছি না কারণ হল মাটির রাস্তায় এখনও কাদা; ঘরের মধ্যেও কাদা। গিয়ে চলাচল করতে পারবও না। একই সাথে রান্নার কোনও ব্যবস্থা নেই। মাটির চুলাটি বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আরও দুই তিন দিন লাগবে বাড়ি ফিরতে। আমরা এখানে শখে আসিনি। যেভাবে রোদ উঠেছে, আশা করি মাটি শুকিয়ে যাবে। তারপর নিজ থেকেই চলে যাবে।’
শহরতলীর কালিপুর গ্রামের বাসিন্দা এমরান মিয়া জানান, ‘পানি কমেছে কিন্তু এখন কাদামাটিতে সমস্যা করছে। ব্যাঙ, পোকামাকড় চলে আসছে ঘরের মধ্যে। আশা করি মাটি শুকালে দুয়েক দিনের ঠিক হয়ে যাবে।’
তবে পাহাড়ি ঢল তেমন না নামায় ইতিমধ্যে পৌর শহরের তেঘরিয়া, আরপিন নগর, বড়পাড়া, ওয়েজখালি, মল্লিকপুর, ষোলঘর, নতুন পাড়া, মধ্যে বাজার, নবী নগর, উকিল পাড়া, জামাইপাড়া, কালী বাড়ি, হাসন নগর, বাঁধন পাড়া, মরাটিলা, পুরাতন বাস স্টেশন, মল্লিকপুর সহ বিভিন্ন এলাকার পানি নেমে গেছে।
পানি কমে যাওয়ায় পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অটোরিকশা, সিএনজি, ইজিবাইক চলাচল করছে স্বাভাবিক গতিতে।
অটোরিকশা চালক মান্না মিয়া বলেন, ‘শহরের পানির কারণে অটোরিকশা চালাতে পারিনি। বন্যার প্রথম দিন চালানোর পরেই আমার অটোরিকশার ব্যাটারি পানি লেগে নষ্ট হয়ে যায়। কয়েকদিন অনেক কষ্টে কাটিয়েছি। আজ আবার ব্যাটারি ঠিক করে চালাচ্ছি। শহরে পানি কমে যাওয়ায় যাত্রাও বেড়েছে। ইনকাম ভাল হচ্ছে।’
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ‘চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের নদী পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে।’
ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস রয়েছে তাতে আশা করা যাচ্ছে সকল এলাকার পরিস্থিতি দু একদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, ‘আমরা বিগত কয়েক দিন যাবৎ রান্না করা খাবার বিতরণ করছি বন্যা কবলিতদের মধ্যে। আশা করা যাচ্ছে দু-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’