৪১ হাজার ফুটের বেশি উঁচুতে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে শূন্যে লাফ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার সফল প্রচেষ্টা চালিয়েছেন আশিক চৌধুরী। এ সময় দুই হাতে বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকা মেলে ধরে আকাশে ভাসতে থাকেন তিনি। এভাবে ৪ হাজার ফুটের কাছাকাছি এসে প্যারাসুটের সাহায্যে নেমে আসেন মাটিতে।
শনিবার (২৫ মে) যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসের উইংস ফিল্ড বিমানঘাঁটিতে এ প্রচেষ্টা চালান আশিক। খবর প্রথম আলোর।
সফলভাবে নেমে আসার পর আশিক চৌধুরী বলেন, ‘কাজটা ঠিকঠাকভাবে করতে পেরে আমি খুব নির্ভার বোধ করছি। আশা করি দেশের জন্য বড় একটা রেকর্ড হবে।’
গতকাল মেমফিসের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় বিমান থেকে লাফ দিলেও আশিকরা আকাশে উড়েছিলেন তারও এক ঘণ্টা আগে। এই সময়ে শরীর থেকে সব নাইট্রোজেন অপসারণের জন্য তাঁকে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে বিমানে বসে থাকতে হয়েছে।
বিশ্ব রেকর্ড গড়তে আশিক চৌধুরীর এই উদ্যোগের নাম ‘দ্য হাইয়েস্ট এভার স্কাই ডাইভ উইথ আ ফ্ল্যাগ’। সফল হলে দ্য ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশন এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দুটি রেকর্ড ভাঙবেন তিনি। তাঁর এই প্রচেষ্টায় আর্থিক সহযোগিতা করছে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবি। সহযোগী হিসেবে আছে প্রথম আলো।
রেকর্ড গড়তে ২১ মে রাতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে উড়াল দেন আশিক চৌধুরী। এরপর এয়ারফিল্ডে দুই দিন অনুশীলন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পূর্বনির্ধারিত (২৫ মে) সময়েই রেকর্ডের প্রচেষ্টা চালালেন তিনি।
আশিক বলেন, ‘দুই হাতে পতাকা থাকায় স্কাই ডাইভিংয়ের সময় ভারসাম্য রক্ষা করতে বেগ পেতে হয়েছে। আকাশে পাক খেতে শুরু করলে সময়মতো প্যারাসুট খোলা খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আমার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে জরুরি মুহূর্তে প্যারাসুট খোলার কৌশল জানা ছিল বলে এ যাত্রায় রক্ষা পেলাম।’
সফল প্রচেষ্টার পর এখন আশিকের অপেক্ষা ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের চূড়ান্ত ঘোষণার। এই প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি গতকাল উইংস ফিল্ড বিমানঘাঁটিতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আশিকের সঙ্গে থাকা জিপিএস ট্র্যাকারসহ ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেছেন। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করবেন এই প্রত্যক্ষদর্শী। তারপর আরও দুজন নিরপেক্ষ বিচারক তা যাচাই করে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।
আশিক জানালেন, এতে সময় লাগবে প্রায় দুই সপ্তাহ। সনদটি হাতে পেলে তবেই গিনেস রেকর্ডসের জন্য আবেদন করা হবে।
আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক তিনি। অফিস সিঙ্গাপুরে হলেও মাসের বড় একটা সময় কাটে বাংলাদেশ ও ভারতে।
চাঁদপুরে বাড়ি হলেও বাবার চাকরির সুবাদে আশিকের বেড়ে ওঠা যশোরে। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়েছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। ২০০৭ সালে স্নাতক হয়েই যোগ দেন দেশের বেসরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ছুটিছাটায় ছুটে যেতেন রোমাঞ্চের টানে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেছেন। তারপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। সেখানেই ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম স্কাই ডাইভিং করেন।
আশিক চৌধুরী যুক্তরাজ্যে এক বছর ধরে প্রশিক্ষণের পর প্রাইভেট পাইলট হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হন। এরপর থাই স্কাই অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির অধীন স্কাই ডাইভিংয়ের ওপর লম্বা প্রশিক্ষণ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। অর্জন করেন স্কাই ডাইভারের লাইসেন্স। এই লাইসেন্স দেখিয়ে বিশ্বের যেকোনো দেশে স্কাই ডাইভিং করতে পারবেন আশিক, যার শুরুটাই তিনি করলেন লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে রেকর্ড গড়তে।