সিলেটে ব্যাপক উন্নয়ন হবে, আমাকে সুযোগ দিন : ড. মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিগত ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এজন্য বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এই শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রকে ধরে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখতে চাই না, আমরা আমাদের সন্তানের মৃত্যু দেখতে চাই না। এজন্য শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার।’

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনী জনসভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ড. মোমেন এসব কথা বলেন।

ড. মোমেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহেনাকে অভিবাদন জানিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সিলেটবাসীর প্রতি খুবই আন্তরিক। তিনি সিলেটের উন্নয়নে সবসময় নজর রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর কারণে গত ৫০ বছরে প্রথমবারের মতো সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে খনন কাজ শুরু হয়েছে। আগামীতে সিলেটে শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। সিলেটে রেলওয়ের উন্নয়ন প্রকল্প ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে তিনি। ইনশাল্লাহ সরকার গঠনের পরপরই আখাউড়া-সিলেট রেললাইনের কাজটিও শুরু হবে।’

আরও পড়ুন > ‘দুইটা বাসে আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে, এতো সহজ না’

জনসভায় উপস্থিত মহিলা-বোনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ক্ষমতায় আসেন তখন মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। গত কয়েক বছরে এটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ শতাংশে। শুধু এটা নয়- নারীর ক্ষমতায়নের ফলে এখন নারীরা জজ, সচিব, রাষ্ট্রদূত, সেনাবাহিনী-পুলিশ ও অন্যান্য শীর্ষপদে আসীন হচ্ছেন। আগে বিভিন্ন সার্টিফিকেট-কাগজাদিতে আমাদের শুধু পিতার নামই লেখা হত। প্রধানমন্ত্রী পিতার নামের সাথে মাতার নাম অর্ন্তভুক্ত করে নারী জাতিকে সম্মান জানিয়েছেন।

ড. মোমেন বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমার বড়ভাই (আবুল মাল আব্দুল মুহিত) এখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে শেখ হাসিনা সুযোগ দিয়েছিলেন আর আপনারা ভোট দিয়েছেন বলে তিনি জনগণের জন্য সৎ ও নিষ্ঠাবান হয়ে কাজ করেছ্নে। আমিও আমার বড়ভাইয়ের মতো কাজ করতে চাই। আগামীতে নির্বাচিত হলে সিলেটের ব্যাপক উন্নয়ন হবে, আপনারা আমাকে আবারও সুযোগ দিন।’

আরও পড়ুন > গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিলো খালেদা জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

এসময় তিনি আগামী ৭ নির্বাচন দলে দলে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে দুষ্টু লোকদের উচিত শিক্ষা দেবার আহবান জানান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৬০১ এর একটি ফ্লাইটে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস আমেরিকা বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলো আমাকে। কিন্তু আমি এতে রাজি হইনি। আমি বলেছি- আমার দেশের জনগণের কল্যাণে এগুলো ব্যবহার করবো। ৫০ বছরের গ্যাস মজুত রেখে অবশিষ্ট থাকলে বিক্রি করবো। কিন্তু জনগণ যাদেরকে জনগণকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন- সেই বিএনপি আমেরিকাকে গ্যাস বিক্রয়ের মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলো।’

আরও পড়ুন > মানুষ পুড়িয়ে মারা কোন ধরণের আন্দোলন : সিলেটে প্রধানমন্ত্রী

তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ জন বুঝে ধন দেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্যাস পায়নি, আওয়ামী লীগের আমলে সেসব স্থানেই গ্যাসের সঙ্গে তেলও পাওয়া গেছে। বিএনপির আমলে মিললে এসব তারা লুটেপুটে খেতো।’

জনসভায় সকাল থেকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হাতে লাল-সবুজ পতাকার সঙ্গে রঙিন পোশাক উৎসবের আমেজ তৈরি হয় গোটা এলাকায়।

বেলা তিনটার দিকে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জনসভা মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। সভা মঞ্চে এসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। এরপর আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানায় সিলেটবাসী।

জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জেবুন্নেছা হক, সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল প্রমুখ।

সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। সঞ্চালনা করেন জেলা ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও অধ্যাপক জাকির হোসেন।