আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ভারত ও সাউথ আফ্রিকা। পয়েন্ট টেবিলেরও এক-দুইয়ে ছিল দুটি দল। তারপরও আগামী ১৯ নভেম্বরের ফাইনালের আগে ম্যাচটিকে ভাবা হচ্ছিল আরেক ফাইনাল। অথচ কোহলির শচীন ছোঁয়া সেঞ্চুরি আর শামি-জাদেজাদের বোলিংয়ে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচটা একপেশে বানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্রেফ উড়িয়ে দিলো ভারত।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বিরাট কোহলির রেকর্ড সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩২৭ রানের বড় টার্গেট দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছুঁড়ে দিয়েছিল ভারত। তবে বড় রানতাড়ায় নেমেই দিশেহারা প্রোটিয়ারা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ১৫ রানের বেশিও করা হয়নি কারোরই। রবীন্দ্র জাদেজা আর মোহাম্মদ শামির বলে বিধ্বস্ত হয়ে প্রোটিয়ারা গুটিয়ে গেছে মাত্র ৮৩ রানে। ভারতের জয় এসেছে ২৪৩ রানের বিশাল ব্যবধানে।
ওয়ানডেতে প্রথমবার দুইশর বেশি রানে হারল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০২ সালে পোর্ট এলিজাবেথে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল সর্বোচ্চ ১৮২ রানে। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের সবচেয়ে বড় জয়ও এটি। দুই দলেরই সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত হয়েছে আগেই। আট ম্যাচের সবগুলো জিতে প্রথম রাউন্ডে শীর্ষে থাকা নিশ্চিত করে ফেলেছে ভারত।
চলতি বিশ্বকাপে একটি বিষয় ওপেন সিক্রেট, তা হলো- টস জিতলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভুলেও আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানো চলবে না! সে কারণে প্রতিপক্ষ যে-ই থাকুক প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং পাওয়ার আশায় থাকতে দেখা যায়। আগের ম্যাচেই টস জিতে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে চরম মূল্য দিয়েছিলেন কিউই অধিনায়ক টম লাথাম। আজ সেই একই ভুল করলেন না রোহিত শর্মা।
অথচ, এই দক্ষিণ আফ্রিকাই আগে ব্যাট করলে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হতে সময় নেয় না। চলতি বছরে খেলা ওয়ানডের মধ্যে আগে ব্যাট করে কেবল একবারই হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপেও দেখা গিয়েছিল সেই চিত্র। এই একই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় নেদারল্যান্ডসের। সেবার পরে ব্যাট করতে নেমে ২৪৬ রানের টার্গেটও পার করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের বিপক্ষেও দলটির অবস্থা নাজুক। অবস্থা এমন, ১০০ রান করাই যেন চ্যালেঞ্জের বিষয় তাদের জন্য।
ধ্বংসযজ্ঞের শুরুটা করেছেন মোহাম্মদ সিরাজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফর্মের তুঙ্গে থাকা কুইন্টন ডি কককে বোল্ড করেন সিরাজ। এরপর পাওয়ারপ্লের আগে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকেও হারায় তারা। রবীন্দ্র জাদেজার বলে বোল্ড হন বাভুমা। পাওয়ারপ্লের শেষ বলে আঘাত হানেন শামি। ফিরে যান এইডেন মার্করাম। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
ক্রিজে দুই বিশ্বস্ত ব্যাটার হেনরিখ ক্লাসেন এবং রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। এই দুজনের ব্যাট থেকে রানের দেখা পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা পেলো না কিছুই। ১১ বলে ১ রান করে দলীয় ৪০ রানে ফিরেছেন ক্লাসেন। আর পরের ওভারে কোন রান না করেই আউট ভ্যান ডার ডুসেন। ৩২ বলে তার রান ১৩। দুইজনের উইকেট গিয়েছে জাদেজা আর শামির ঝুলিতে।
ডেভিড মিলার আর মার্কো জানসেন তবু আশা হয়ে ছিলেন ক্রিজে। তবে সেটাও অতি অল্প সময়ের জন্য। মিলার করেছেন ১১ আর জানসেনের স্কোর ১৪। জাদেজা আর কুলদীপের শিকার তারা। টেলএন্ডারদের কেউ অবশ্য মিরাকল ঘটাতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়েছে মাত্র ৮৩ রানে।
এর আগে রোববার (৫ নভেম্বর) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান তোলে ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০১ রান করেছেন বিরাট কোহলি। তাছড়া ৭৭ রান এসেছে শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাট থেকে।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন রোহিত শর্মা-শুভমান গিল। বিশেষ করে রোহিত শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। ২৩ রান করে গিল বিদায় নিলে ভাঙে ৬২ রানের উদ্বোধনী জুটি। এরপর রোহিতও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৪০ রান।
তিনে নেমে ধীরগতির শুরু করেছিলেন কোহলি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের গতি বাড়িয়েছেন। শ্রেয়াস আইয়ারকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ১৩৪ রানের জুটি গড়েন কোহলি। এই জুটিতেই বড় সংগ্রহের ভিত পায় ভারত।
আইয়ার ৭৭ করে সাজঘরে ফিরলেও সেঞ্চুরি তোলে নিয়েছেন কোহলি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম সেঞ্চুরির দিনটা তার জন্য আরো একটা কারণে বিশেষ। আজ তার জন্মদিন ছিল। বার্থডে বয়ের সেঞ্চুরির সঙ্গে শেষদিকে রবীন্দ্র জাদেজার ক্যামিও, সবমিলিয়ে বড় সংগ্রহ গড়েছে স্বাগতিকরা।