নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ভারতকে টপকে বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে দলটি। ৬ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে পিছিয়ে থাকায় দ্বিতীয় পজিশনে রয়েছে ভারত। ৬ ও ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট করে নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ পজিশনে আছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
এদিকে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম চার ম্যাচ জিতে যেমন ফুলে উঠেছিল কিউইদের বেলুন, পরের তিন ম্যাচ হেরে তা আবারও চুপসে যাচ্ছে। আজকের ম্যাচে হারের ফলে তাদের শেষ চারে যাওয়ার স্বপ্ন শঙ্কায় পড়ে গেল।
প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের পিটিয়ে ৩৫৭ রান তুলে বোলিংয়েও ঝলক দেখাল দক্ষিণ আফ্রিকা। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ১৯০ রানের বড় ব্যবধানে জিতে সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছে প্রোটিয়ারা। সেইসঙ্গে নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে ভারতকে টপকে পয়েন্ট টেবিলে ফের শীর্ষে উঠল তারা।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম চার ম্যাচ জিতে যেমন ফুলে উঠেছিল কিউইদের বেলুন, পরের তিন ম্যাচ হেরে তা আবারও চুপসে যাচ্ছে। আজকের ম্যাচে হারের ফলে তাদের শেষ চারে যাওয়ার স্বপ্ন শঙ্কায় পড়ে গেল।
এদিন টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে ব্যাট করতে পাঠান কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। বোলারদের তুলোধুনা করে রানের পাহাড় গড়েন ডিক কক, ডুসেনরা। ৩৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৬৭ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।
এদিন চারটি উইকেট নিয়েছেন কেশব মহারাজ, তিনটি মার্কো ইয়ানসেন, দুটি গেরাল্ড কোয়েটজি ও এক উইকেটের দেখা পেয়েছেন কাগিসো রাবাদা।
৩৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় কিউইরা। তৃতীয় ওভারের শেষ বলটি শর্ট অফ লেংথ ডেলিভারি দিয়েছিলেন মার্কো ইয়ানসেন। সেটিকে কাট করতে গিয়ে সেকেন্ড স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা মার্করামের তালুবন্দি হন ডেভন কনওয়ে। কনওয়ের আউটে তিন ওভার শেষে আট রানে এক উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বকাপের চলতি আসরের প্রথম ম্যাচে ১৫২ রানের অপরাজিত ইনিংসটির পর যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন কনওয়ে। তার পরের ছয় ম্যাচের সংগ্রহ যথাক্রমে ৩২, ৪৫, ২০, ০, ২৮ ও ২।
কনওয়ের ফেরার পর কিউইদের চেপে ধরেন প্রোটিয়া বেলাররা। এ সময় দেখেশুনে ধীরলয়ে খেলতে থাকেন উইলে ইয়াং ও রাচিন রবীন্দ্র। তবে শুরুর চাপ সামলে ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বের হতে থাকেন এই দুই ব্যাটার।
কিন্তু হাত খুলে খেলতে গিয়ে গেরাল্ড কোয়েটজির হাতে ধরা পড়েন রাচিন। বিশ্বকাপের এবারের আসরে ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করা রাচিনকে এদিন ফিরতে হয় মাত্র ৯ রান করে। এবারও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্রেকথ্রু এনে দেন ইয়ানসেন। নবম ওভারের শেষ ডেলিভারিটি শর্ট লেংথে রেখে বাউন্সার দেন ইয়ানসেন। সেটিকে ঘুরিয়ে মারতে গিয়ে টপ এজ হন রাচিন। ফলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে ধরা পড়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় এই ব্যাটারকে। প্রথম পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারিয়ে ৫১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।
পাওয়ার প্লের পরের ওভারেই আউট হন উইল ইয়াং। ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে কোয়েটজির করা আউটসাইড অফের বলটি ডিফেন্স করতে যান ইয়াং। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে তা ডি ককের গ্লাভসে চলে যায়। ফলে কট বিহাউন্ড হয়ে যান তিনি। ফেরার আগে ৩৭ বল মোকাবিলা করে ৩৩ রান করেন এই কিউই ওপেনার।
ইয়াং ফিরলে ৫৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে আরও বিপদ বাড়ে নিউজিল্যান্ডের। ১৫ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬৭ রান।
১৬তম ওভারের প্রথম বলেই কিউই অধিনায়ককে ফেরান রাবাদা। তার স্ট্যাম্পে রাখা ডেলিভারিটি লেগে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ল্যাথাম। কিন্তু বলটি সোজা উপরে উঠে গেলে শর্টে ফিল্ড করা কেশভ মহারাজ দৌড়ে এসে ক্যাচ লুফে নেন। এর দুই বল পরই ডেরিল মিচেল আউট হয়ে যেতে পারতেন, তবে ভাগ্যের জোরে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। রাবাদার অফস্ট্যাম্পে রাখা ডেলিভারি ডিফেন্ড করতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে স্লিপে চলে যায় বলটি। কিন্তু স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার ও ডি কক দুজনেরই আওতার বাইরে থাকায় ক্যাচটি ধরা পড়েনি।
তবে ১৯তম ওভারে আর বাঁচতে পারেননি মিচেল। কেশব মহারাজের ঝুলিয়ে দেয়া বল পেয়ে এগিয়ে এসে সজোরে ব্যাট চালান তিনি। কিন্তু মিসকিউ হয়ে লং অনে ডেভিড মিলারের তালুবন্দি হন তিনি। ৩০ বলে ২৪ রান করে ফিরে যান মিচেল। আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা কিউই ব্যাটারদের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করেন, তার সুফল তুলে নেন মহারাজ। এর ফলে ৯০ রানে পাঁচ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
দলীয় একশ রানের মাথায় নিউজিল্যান্ডের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান মহারাজ। ২৩তম ওভারের চতুর্থ বলটি ঝুলিয়ে দেন মহারাজ। ফুলার লেংথের ডেলিভারিটি এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হন মিচেল সান্টনার। ফলে উইকেট ভেঙে দিয়ে চলে যায় বল।
২৬তম ওভারের প্রথম বলেই টিম সাউদিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মার্কো ইয়ানসেন। ইয়ানসেনের ফুলার লেংথের উইকেটের মধ্যের ডেলিভারিতে ক্রস ব্যাট চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হন। বল পায়ে লাগলে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। তবে ব্যাটারদের যাওয়া-আসার মাঝে উইকেটের একপাশ আগলে ছিলেন গ্লেন ফিলিপস।
পরের ওভারেই জিমি নিশামকে বোল্ড করেন মহারাজ। ৯ রান করা ট্রেন্ট বোল্টকেও তিনি ফেরান। আর শেষে ব্যক্তিগত ৬০ রান করে ১৬৭ রানের মাথায় গ্লেন ফিলিপস আউট হলে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।
প্রথম ইনিংসে দেখেশুনে শুরুর পর দলীয় ৩৮ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে প্রোটিয়াদের। ২৮ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ২৪ রান করে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা বিদায় নেন। এরপর রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে সঙ্গে নিয়ে বড় সংগ্রহেরে উদ্দেশ্যে ব্যাট করতে থাকেন কুইন্টন ডি কক। তাদের এই জুটিই ইনিংসের ভিত্তি গড়ে দেয়।
দলের রান এক উইকেটে ৩৮ থেকে ২৩৮-এ পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেন কুইন্টন ডি কক। টিম সাউদির ওয়াইডার লেংথের শর্ট বলটি ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে ঘুরিয়ে সীমানা ছাড়া করতে চেয়ে বাউন্ডারিতে গ্লেন ফিলিপসের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
এর মাঝে চলতি বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরিটি তুলে নেন কুইন্টন। এতে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান বনে যান দক্ষিণ আফ্রিকার এই অভিজ্ঞ ওপেনার। এর আগে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ আসরে সর্বোচ্চ পাঁচটি শতক হাঁকিয়েছিলেন ভারতের হিটম্যান রোহিত শর্মা।
শুধু তাই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের করা মোট সেঞ্চুরির দিক থেকে তিন নম্বরে উঠে এসেছেন ডি কক। ২৭টি সেঞ্চুরি নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন দেশটির সাবেক ওপেনার হাশিম আমলা। ২৫ সেঞ্চুরি নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন মিস্টার ৩৬০ এবি ডি ভিলিয়ার্স। আজকের সেঞ্চুরিতে ডি ককের সেঞ্চুরির সংখ্যা হলো ২১টি।
ডি কক ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন ডুসেন। এরপর ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠেন তিনি। শেষ সাত ওভারে ৯৯ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা।
৪৮তম ওভারের প্রথম বলে সাউদির বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় ডুসেনকে। ফেরার আগে ৯টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ১১৮ বলে ১৩৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
বাকি কাজটুকু সারেন ডেভিড মিলার ও হাইনরিখ ক্লাসেন। মিলার ৩০ বলে ৫৩ রান করে ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন। আর মার্করাম এক বল খেলার সুযোগ পেয়ে তাতে ছক্কা হাঁকান।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভার শেষে চার উইকেট হারিয়ে ৩৫৭ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে টিম সাউদি দুটি এবং জিমি নিশাম ও ট্রেন্ট বোল্ট একটি করে উইকেট নেন। ১৩৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন।