বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের লড়াই জমেনি একটুও। লড়াই তো দূরের কথা, আহমেদাবাদে স্বাগতিক ভারতের কাছে পাত্তাই পেল না পাকিস্তান!
ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের শুরুটা ভালো হলেও তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে মিডল অর্ডার। বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ান ছাড়া আর কেউই দাঁড়াতেই পারেননি। ছোট পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে পারেনি বোলাররাও। শাহিন আফ্রিদি-হারিস রউফদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ঝড় তুলেছেন রোহিত শর্মা! যার ফলাফল ৭ উইকেটের বিশাল পরাজয়।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪২ ওভার ৫ বলে ১৯১ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ রান এসেছে অধিনায়ক বাবর আজমের ব্যাট থেকে। জবাবে খেলতে নেমে ৩০ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। স্বাগতিকদের হয়ে ৬৩ বলে ৮৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন রোহিত।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আক্রমণাত্মক শুরু করেন দুই ওপেনার গিল-রোহিত শর্মা। নিজের খেলা প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন গিল। ভালো শুরুর আভাস দিলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথে করেছিলেন শাহিন আফ্রিদি। সেখানে বৃত্তের ওপর দিয়ে তুলে মারার চেষ্টা করেছিলেন গিল। তবে পারেননি। ব্যাকওয়াড পয়েন্টে শাদাব খানের হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১১ বলে ১৬ রান।
তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি বিরাট কোহলিও। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারও থেমেছেন ১৬ রানে। হাসান আলিকে মিড অফের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন মোহাম্মদ নাওয়াজের হাতে।
গিল-কোহলি রান না পেলেও দলকে তা টের পেতে দেননি রোহিত শর্মা। এই অভিজ্ঞ ওপেনার এক প্রান্তে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন। হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছেন মাত্র ৩৬ বলে। ছুটছিলেন শতরানের দিকে। তবে কাটা পড়েন ৮৬ রানে। এই ওপেনারকে ফিরিয়েছেন আফ্রিদি।
রোহিত ফিরলে বাকি কাজটা লোকেশ রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবেই সেরেছেন শ্রেয়াস আইয়ার। দলকে জয়ের বন্দরে নোঙর করানোর পথে ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরিটাও পেয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। শেশ পর্যন্ত আইয়ার অপরাজিত থেকেছেন ৫৩ রান করে। আর রাহুল ১৯ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ফলে ৭ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে ভারত।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করেছিলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল-হক। ৮ম ওভারের শেষ বলে আব্দুল্লাহ শফিককে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মোহাম্মদ সিরাজ। ক্রিজ ছাড়ার আগে ২৪ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২০ রান করেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো শফিক।
এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইমাম উল হকও। এই ওপেনার গত দুই ম্যাচে রান পাননি। আজ শুরুটা দারুণ করেছিলেন। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না। হার্দিকের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েছেন।
গত দুই ম্যাচে রান পাননি বাবর আজম। বলা যায় ব্যর্থই ছিলেন। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে দলের সেরা ব্যাটারের এমন অফফর্ম টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তার কারণ ছিল। তবে আজ ভারতের বিপক্ষে ঠিকই স্বরূপে ফিরলেন এই ব্যাটার। দুই ওপেনার দ্রুত সাজঘরে ফেরার পর রিজওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন বাবর। তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরিও।
চলমান বিশ্বকাপে এটা তার প্রথম ফিফটি। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক। মোহাম্মদ সিরাজের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫০ রান।
অধিনায়কের বিদায়ের পরই পথ হারায় দল। ৩৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি লেগ স্টাম্পের ওপর করেছিলেন কুলদীপ। টার্ন করে ভেতররের দিকে ঢোকা বলে লাইন মিস করেছেন সউদ শাকিল। বল পায়ে আঘাত হানলে আম্পায়ার আউট দেননি। তবে রিভিউ নেনে রোহিত। তাতে দেখা যায় বল লেগ ও মিডল স্টাম্পে আঘাত হানতো। ফলে সাজঘরে ফিরতে হয় শাকিলকে।
তিন বল পর ফিরেছেন ইফতিখার আহমেদও। এই অভিজ্ঞ ব্যাটার লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে ইনসাইড এডজে বোল্ড হয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪ রান।
পরের ওভারেই ফিরেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ানও। ৪৯ রান করে জাসপ্রিত বুমরাহরা বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। এক ওভার পর আক্রমণে ফিরে শাদাব খানকেও বোল্ড করেছেন এই ডানহাতি পেসার। একই সঙ্গে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদন্ড ভেঙে দেন বুমরাহ।
এরপর আর দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। বলার মতো স্কোর করতে পারেননি লোয়ার মিডল অর্ডারের কোনো ব্যাটার। মাত্র ৩৬ রান যোগ করতেই শেষের ৮ উইকেট হারিয়েছে বাবরের দল। তাতে দুইশ ছোয়ার আগেই অলআউট হয়েছে তারা।