সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পাথর ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন কর্তৃক জনপ্রতিনিধিদের জড়িয়ে একটি বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন তার বক্তব্যের একাংশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
জানা যায়, গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) ইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন ইউনিয়নের কান্দলা নয়াবাজারের উন্নয়নমূলক কাজের সূচনাকালে একটি ফেসবুক পেজের লাইভ বক্তব্যে তার ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, ”(তার বক্তব্যের হুবহু তুলে ধরা হয়েছে) পরিশেষে আমি একটি কথা বলতে চাই, যদিও আমার সহযোদ্ধা চেয়ারম্যানবৃন্দ আমার উপর ক্ষুদ্র হবেন, তারপরও আমি বলতে চাই। আমি এই এক বৎসর বিগত ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার পর থেকে আল্লাহ সাক্ষী রেখে বলতে পারব এই ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের একটি টাকাও আমার পকেটে যায় নাই। আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এখন পর্যন্ত একটা টাকাও আমার পকেটে ঢুকাই নাই, আমি রুজিও করি নাই। আমি সরকারের বরাদ্দগুলা সরকারের রাস্তায় ব্যয় করতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমি দাবী করে বলতে পারি খাজুরগাছ নিয়েও অনেক আলিম উলামা নির্বাচিত হয়েছেন, বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে বিভিন্ন আলিম উলামা নির্বাচিত হয়েছেন, আমার বিশ্বাস এইভাবে বুকে হাত দিয়ে সাড়ে ৪ হাজার চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন চেয়ারম্যানও বলতে পারবে না যে সরকারের টাকা আত্মসাত করে নাই। একমাত্র শুধু আমিই বলতে পারব ইনশাআল্লাহ, আমি সরকারের একটি টাকা আত্মসাত করি নাই।”
চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিনের এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউপি চেয়ারম্যানদের জড়িয়ে মিথ্যা অপ্রাসঙ্গিক মানহানিকর বক্তব্য দেয়ায় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য নিয়ে চেয়ারম্যান ফোরাম কানাইঘাট উপজেলা শাখার সভাপতি দিঘীরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী বলেন, ‘তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে তিনি ক্ষুদ্ধ। অনেক ইউপি চেয়ারম্যান তাকে ফোন দিয়ে চেয়ারম্যানদের জড়িয়ে তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আমি তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য বলি। পরবর্তীতে তিনি চেয়ারম্যানদের জড়িয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
এছাড়াও চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিনের এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ফোরাম কানাইঘাট উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আফসর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা জামাল উদ্দিন, ঝিঙ্গাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আবু বক্কর।
তারা বলেছেন, দেশের সমস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের জড়িয়ে এ ধরণের বক্তব্য মোটেও ঠিক হয়নি। অধিকাংশ চেয়ারম্যানরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার এমন বক্তব্য বলা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর রবিবার ইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন ফেসবুক লাইভে চেয়ারম্যানদের জড়িয়ে তার বক্তব্যের একাংশের দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ফেসবুক লাইভে বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আমার একটি ভুল বক্তব্য হয়েছিল। সেই বক্তব্যটি আমার সহকর্মী চেয়ারম্যানবৃন্দের বিরুদ্ধে চলে গেছে। তাই আমি পরবর্তীতে লাইভটি শুনে নিজ মন থেকে ভুল হয়েছে মর্মে আমি আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং সাড়ে ৪ হাজার জনপ্রতিনিধি ও আমার সহকারী চেয়ারম্যানদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি। ইচ্ছা করে কোন জনপ্রতিনিধিকে হেয়প্রতিপন্ন করতে চাইনি, এমন বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল না।’
তমিজ উদ্দিন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার ইউনিয়নে রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে বলে বেশিরভাগ লোকজন জানিয়েছেন। আবার অনেকে বলেছেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে তমিজ উদ্দিন ইউপি সদস্যের দায়িত্ব পালনের সময় তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইউনিয়নের বেশকিছু কাঁচা বড় বড় রাস্তা তার নিজস্ব ফেলুডার ও স্কেভেটর দিয়ে নিজ অর্থায়নে করেছিলেন বলে ইউনিয়নবাসীকে জানিয়েছিলেন। সেই সব উন্নয়নের অনেক টাকা এমপি মহোদয় টি.আর, কাবিখা, কাবিটা থেকে উত্তোলনের অভিযোগ তুলেছেন তারা।