দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ইতালির মিলান শহরে রিজিওনাল সামিট-২০২৩ এ অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত টিম ক্যানভাস নামে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। ক্যানভাস টিমের সদস্যরা হচ্ছেন আসিফ মোহাম্মদ তাজওয়ার, আহমেদ আশফাক, নাদিরা চৌধুরী, রোকসানা আক্তার ও মাসুম আহমেদ।
ক্যানভাস টিমের ব্যবসা প্রস্তাবনাটি ছিল- পরিত্যক্ত কাপড়গুলোকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে নতুন কিছু তৈরি করা যায় এবং তা বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কীভাবে অবদান রাখা যায়।
হাল্ট প্রাইজ ২০২৩ প্রতিযোগিতার মূল উপপাদ্য ছিল রিডিজাইনিং ফ্যাশন। অর্থাৎ একটি বিদ্যমান পোশাক পরিবর্তন করা যাতে এটি আরও পরিধানের উপযোগী হয়। এর মাধ্যমে আমরা নষ্ট হয়ে যাওয়া কাপড়গুলোকে নতুনভাবে ব্যবহারের উপযোগ্য করে তুলতে পারা যায়। ক্যানভাস টিমের ব্যবসা প্রস্তাবনার মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পাশাপাশি এটি পরিবেশ ও প্রতিবেশবান্ধবও। বিশ্বের ফ্যাশন হাউজ ও টেইলারিং কারখানাগুলো থেকে পরিত্যাক্ত টুকরো কাপড় সংগ্রহ করে এসব দিয়ে নতুন ধরনের ডিজাইন ও ফ্যাশন সম্বলিত পোষাক তৈরী করে তা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বাজারজাতের উদ্যোগ নেয়া হবে। যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে।
মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখা জানায়, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এম হাবিবুর রহমান হলে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ও হাল্ট প্রাইজ-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালা থেকে অনেকগুলো টিম গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে অন ক্যাম্পাস প্রতিযোগিতায় ক্যানভাস টিম বিজয়ী হয়। টিম ক্যানভাস ঢাকায় অনুষ্ঠিত সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত গুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করে। তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ভারতের মুম্বাইতে। সেখানে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির টিম ক্যানভাস সফলতা লাভ করায় এখন ইতালির মিলান শহরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির এ কৃতিত্বে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের চাকুরিপ্রার্থী নয়; চাকুরিদাতা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাত্ত্বিক জ্ঞানদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান যাতে বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা আন্তরিক। সেজন্যই আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা গুগল, অ্যামাজন, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জসহ দেশে-বিদেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। হাল্ট প্রাইজে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো করেছেন। এখানকার অনেকেই শিক্ষার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে লেখাপড়ার শেষ করার পূর্বেই অনেকে মাসে সম্মানজনক উপার্জন করছেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের।
ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হাল্ট প্রাইজের জন্য একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটির শিক্ষকরা সারা বছর শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী ব্যবসা প্রস্তাবনা উন্নয়নে পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে আসেন। আর এর প্রতিফলন আমরা পাচ্ছি যখন আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্বে দেশের সুমান বয়ে নিয়ে আসেন। আমি টিম ক্যানভাসের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকবৃন্দকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, এটা শুধু আমাদের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্য সম্মানের, আনন্দের। বিশ্বের সাথে কীভাবে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, শিক্ষার্থীদের জন্য তা নিশ্চিত করতে আমরা সচেষ্ট।
উল্লেখ্য, হাল্ট প্রাইজের এ রাউন্ডটি বিশ্বের ১২টি শহরে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক ধাপ পেরিয়ে এ রাউন্ডে আসা ৯০টি দলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি। হাল্ট প্রাইজ হল একটি বার্ষিক প্রতিযোগিতা যেখানে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ এর ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পায়। বর্তমানে হাল্ট ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল এবং ইউনাইটেড ন্যাশন্স ফাউন্ডেশন এর অংশীদারিত্বে অব্যাহত আছে এই হাল্ট প্রাইজ। হাল্ট প্রাইজকে বলা হয় নোবেল প্রাইজ ফর স্টুডেন্টস।