কুলাউড়া সাবরেজিস্ট্রার অফিস যেন ব্যক্তি আয়ের উৎস!


  • ৬ মাস থেকে ৪ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে অফিস
  • সরকার হারাচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব
  • দুর্ভোগ সেবাগ্রহীতাদের, পকেট ভরছে কর্তাদের

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম গত ৬ মাস থেকে চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে। যার ফলে সপ্তাহে ২দিন দলিল রেজিস্ট্রি হয়। এতে প্রতিনিয়ত এ অফিসে বিশৃঙ্খলা লেগে থাকার পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। সেই সাথে জমি ক্রেতা-বিক্রেতারাও পোহাচ্ছেন চরম দুর্ভোগ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অফিসের বড়কর্তা থেকে শুরু করে অধস্তন সকলেই পকেট ভারী করার ধান্দায় ব্যস্ত থাকেন।

জেলার সর্ববৃহৎ এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে সবচেয়ে বেশি দলিল সম্পাদিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। যেখানে ৫ কর্মদিবসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে মাত্র ২ কর্মদিবসে দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। ফলে ২ কর্মদিবসে বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে গোটা অফিস। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চলে অনৈতিক লেনদেন। অবৈধ এসব কর্মকাণ্ডে পকেট ভারী করছেন অফিসের বড়কর্তা থেকে শুরু করে অধস্তন সকলেই। সরেজমিন কর্মদিবসে গেলে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক হতাশা ব্যক্ত করে জানান, ‘অফিসে আগের সেই জৌলুস নেই। গত ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাস অফিসের কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে। গত ৬ মাসে ৪ জন সাবরেজিস্ট্রার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ একমাস সর্বোচ্চ দেড় মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময়ে সবাই নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখেছেন। অফিসের লোকজন সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। ফলে সবারই ব্যক্তিগত ইনকামের মানসিকতা গড়ে উঠেছে।’

জানা যায়, সপ্তাহে ২ কার্মদিবসে গত ৬ মাসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে আসা সাবরেজিস্টারগণ দায়িত্ব পালনে ছিলেন অনেকটা উদাসিন। দলিল সম্পাদনার চেয়ে তারা পরামর্শেই বেশি সময় ক্ষেপন করেন। অনুসন্ধানে জানা গেলো এই পরামর্শেও নামেই চলে দলির সম্পাদনের অবৈধ চুক্তির লেনদেন। কেন না অফিসে সিসি ক্যামেরার কারণে আগের মতো টেবিলে লেনদেন করা যায় না। তাই খাস কামরায় পরামর্শের নামে কাজটি সেরে নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুলাউড়া উপজেলা জেলার বৃহৎ উপজেলা। এই উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে সপ্তাহে ৫ কর্মদিবসে দলিল রেজিস্ট্রি কাজ সম্পাদন করতেই হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিন কম করে হলেও ৫০টির অধিক দলিল সম্পাদন করলে আড়াই থেকে ৩শ দলিল রেজিস্টারি করা যায়। অথচ সেখানে ২ কর্মদিবসে মাত্র শ’খানেক দলিল সম্পাদিত হয়। এতে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হয়।

কুলাউড়া উপজেলার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাবরেজিস্ট্রার রহমত উল্ল্যাহ, যিনি মূলত কমলগঞ্জ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন কুলাউড়া। সপ্তাহে ২ কর্মদিবস অর্থাৎ বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি না থাকলে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

ভারপ্রাপ্ত সাবরেজিস্ট্রার রহমত উল্ল্যাহ জানান, এখানে এসে প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা শুধু কষ্টসাধ্য নয় ঝামেলারও। এখানে একজন অফিসার দায়িত্বে দিলে খুব উপকার হবে। ঝামেলা এড়াতে তিনি অনেক বেশি সময় দিয়েও দায়িত্ব পালন করেন। এতবড় একটা উপজেলায় স্বচ্ছভাবে কাজ করলেও ৫ দিনের স্থলে ২দিনে মানুষকে সন্তোষ্ট করা সম্ভব নয়, তাই পরিবেশটা বিশৃঙ্খল মনে হয়। আপনারা যোগাযোগ করে একজন কর্মকর্তা আনেন।

এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার সোহেল রানা মিলন জানান, ‘সারাদেশে কর্মকর্তা সঙ্কট। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও বড়লেখা দু’টি বৃহৎ উপজেলায় সাবরেজিস্ট্রার নেই। পার্শ্ববর্তী উজেলার কর্মকর্তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। বিষয়টি আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়েছি। তাড়াতাড়ি এসব কর্মস্থলে একজন কর্মকর্তা দিলে এলাকার মানুষেরও সুবিধা, আমাদেরও সুবিধা।’