‘প্রচণ্ড গরমের তাপে ঘেমে ঘুম থেকে উঠতে হয় সকালে। বিদ্যুত না থাকায় দিনের শুরুটাই হয় হাপিত্যেশের মধ্য দিয়ে। সকালে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে একবার বিদ্যুতের দেখা মিললেও তা আধাঘণ্টা বা একঘন্টার জন্য। এর মধ্যেই বিদ্যুত আবার চলে যায়। গরমের তীব্রতা বাড়ে সেই সাথে বিদ্যুতহীনতায় বাড়ে জন দুর্ভোগ। বলতে গেলে সারা দিন বিদ্যুত থাকেই না পাগলা বাজার এলাকায়। মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ আসলেও তা ক্ষণিকের জন্য। আমরা বিদ্যুতের এমন ভেল্কিবাজিতে চূড়ান্ত রকমের অতিষ্ট।’ -এভাবেই মনের ভিতরের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন পাগলা বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী হাকিম প্রহল্লাদ দেবনাথ।
এ চিত্র শুধুমাত্র পাগলা বাজার এলাকার নয়, এটি শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামের বর্তমান চিত্র।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন তো যেমন তেমন রাতের অবস্থা তো আরও খারাপ। প্রত্যেক রাতেই প্রথম দিকে, মধ্যভাগে এবং শেষার্ধে বিদ্যুৎ থাকে না শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সন্ধ্যায় কিছু সময় বিদ্যুৎ থাকলেও রাত ৯/১০টার দিকে চলে যায়। আর আসে মধ্য রাতে। কখনোসখনো কিছু সময়ের জন্য এলেও তা স্থায়ীত্ব থাকে সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা।
এদিকে, দিনের অবস্থাও একই রকম। এক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলে ২ঘন্টা থাকে না। এমন অঘোষিত স্বেচ্ছাচারী চক্রাকারে ঘূর্ণায়ন হচ্ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পল্লীবিদ্যুতের মধ্যে। এতে চরম অসন্তোষ্ট সাধারণ মানুষ।
শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের এমন স্বেচ্ছাচারীতায় চরম বিপাকে শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ নারী-পুরুষ ও উপজেলার হাজার হাজার শিক্ষার্থীবৃন্দ। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে দিনের বেলায় স্কুলে ফ্যান চালানো যায় না বিদ্যুতহীনতার কারণে। এতে নাস্তানাবুদ হয়ে উঠেন স্কুল-কলেজগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুতবিভ্রাটের কারণে শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও কাজ করতে পারছেন না পেশাজীবিরা। কবে শেষ হবে বিদ্যুতের এমন স্বেচ্ছাচারীতা শান্তিগঞ্জবাসীর মনে এখন এমনই প্রশ্ন।
পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমিন আক্তার বলেন, স্কুলে গেলে বিদ্যুত থাকে না, বাসায় আসলেও বিদ্যুত পাই না। প্রচণ্ড গরম পড়েছে। ঘামে সবার শরীর দুর্বল থাকে সব সময়। মাঝে মাঝে বিদ্যুত আসলেও এক ঘন্টার ভিতরে তা আবার চলেও যায়। সন্ধ্যা সময় পড়তে বসলেও বিদ্যুত অনেকটা ভোগায়।
পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী অর্পণ দেবনাথ বলেন, সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না। ঠিকমতো মোবাইল ফোনই চার্জ করানো যায় না। আবার বিদ্যুত বিল আসে সর্বোচ্চ। মাঝে মাঝে মন চায়, বিদ্যুত বিভাগের এমন স্বেচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে আইনি প্রতিবাদ করি।
উপজেলার পাইকাপন গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা যে গ্রামে থাকি সেখানে সব সময়ই বিদ্যুতে ডিস্টার্ব করে। আমরা বর্তমানেও কম বিদ্যুত পাচ্ছি। এক ঘন্টা থাকলে দুই ঘন্টা নাই এমন অবস্থা আমাদের এখানে।
শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সহকারি জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) নাদির হোসেন বলেন, ‘লোডশেডিং একটি জাতীয় সমস্য। মূলতঃ লোডশেডিংয়ের কারণেই বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। আরও মাসখানেক এরকম সমস্যা থাকবে।’