সুরমার অব্যাহত ভাঙনে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জালালপুর গ্রামটি নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। এমনকি ভাঙনের মুখে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে গ্রামের প্রাচীন জালালপুর জামে মসজিদ।
গত কয়েক দশকে এই গ্রামে শতাধিক মানুষের ঘর সুরমা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কাটাখালি বাজার থেকে জালালপুর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
নদীর পারেই বীরমুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলীর বসতঘর। নদীভাঙনে ভিটেমাটি এখন ছুঁইছুঁই। দেখা দিয়েছে বাড়ির উঠোনে ফাটল। ঝুঁকি থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে একাত্তরের যুদ্ধবীর উস্তার আলী বলেন, ‘নদী ভাঙনে বসত ভিটা এখন বিলীন হওয়ার পথে। বড় বড় ফাটল আর ভাঙন দেখা দিলে ভয়ে পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছি। নদী ভাঙনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি, আমাদের দেখার কেউ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুরমার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসক, পাউবো, এমপি মহোদয়সহ কত আবেদন করেছি, আর দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা এখন কার কাছে যাবো। বলার ভাষা নেই। তাই ভাঙন রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সুরমা নদীর দক্ষিণ পারে অবস্থিত জালালপুর গ্রামটি এখন নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, কবরস্থান, মসজিদ-মাদরসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গ্রাস করেছে। প্রায় আড়াই শ’ বছরের পুরোনো মসজিদটি ভাঙনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা অনেকে দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কিত হয়ে গ্রামে বসবাস করছেন।
গ্রামবাসীরা বলেন, ‘নদী ভাঙনের বিষয়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দীর্ঘদিনেও কোনো প্রতিকার মিলেনি। আমাদের পীঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। নিঃস হয়ে যাচ্ছে মানুষ। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে না পারলে পুরো গ্রামটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করে অবিলম্বে ব্লক বসানো প্রয়োজন।’
গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ সংবাদ কর্মী এমএ করিম লিলু (৬০) বলেন, সুরমা নদীর অব্যাহত ভাঙনে প্রাচীন গ্রাম জালালপুর এখন বিলীন হওয়ার পথে। কয়েক দশকে অন্তত শতাধিক পরিবার বসতভিটে, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। প্রায় আড়াই শ’ বছরের পুরাতন জামে মসজিদটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি না দিলে পুরো গ্রামটি সুরমার জলে মিশে যাবে।
মাওলানা কাজী মাহমুদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘সুরমা নদীর ভাঙন ঝুঁকিতে আমরা বসবাস করছি। নদীভাঙনের শিকার হয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। অসংখ্য বসত ঘরসহ গ্রামের প্রাচীন জামে মসজিদটি এখন বিলীনের পথে। নদী ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অর্ধেক গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ মুর্শেদ মিশু বলেন, ‘অবহিত করা হলে নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু বলেন, ‘সুরমার ভাঙনে জালালপুর গ্রাম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিলীন হওয়ার পথে গ্রামের প্রাচীন জামে মসজিদসহ অনেক বসতভিটা। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসকের সমন্বয় মিটিংয়ে নদী ভাঙনের বিষয়টি উত্থাপন করেছি। এর প্রেক্ষিতে পাউবো কর্মকর্তারা পরিদর্শনও করেছেন। আশা করি শীঘ্রই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’