হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পাকা ঘর নির্মাণ করায় বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।
পার্শ্ববর্তী উপজেলা মাধবপুরের বাসিন্দাসহ স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী দোকান পরিচালনার জন্য ঘর দুটি নির্মাণ করছেন।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মসজিদ সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট পুরনো মহাসড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার (পানি প্রবাহের জন্য বড় খাল) পাশেই বিশাল দুটি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার একটি পাকা ঘরের মাটির নিচে চারটি কক্ষ করা হচ্ছে, যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
ব্যবসায়ীরা বন বিভাগের অনুমতি নিয়েই কাজটি করছেন বলে দাবি করলেও পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মীরা বলছেন সংরক্ষিত বনের ভেতরে পাকা ঘর নির্মাণে আইনি বাধা আছে। পাকাঘর নির্মাণ করা হলে উদ্যানের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গেলে দেখা যায়, পুরনো মহাসড়কের পাশে জাতীয় উদ্যানের জায়গা দখল করে কাঠ-টিনের দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মসজিদ সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট পুরনো মহাসড়কের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে দুটি পাকা দোকানঘর। ঘর দুটি নির্মাণ করছেন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লীর আকাশ দেববর্মা ও মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ।
তাদের দাবি, বন বিভাগ ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বন্য প্রাণী সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) অনুমতি নিয়ে তারা পাকাঘর নির্মাণ করছেন।
এ বিষয় কথা হলে বন বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, সংরক্ষিত বন দখল, পাকা দোকানঘর নির্মাণসহ বনের ক্ষতিসাধনকারী ব্যক্তিদের অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছরের করাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করার নিয়ম করেছেন। বনে প্রবেশ করতে হলেও বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এখানে সংরক্ষিত বনের জায়গা দখল করে পাকা দোকানঘরসহ অনেক কাঠ-টিনের দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে, যা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলবে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘পাকা দোকানঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।’
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা আল-আমিন বলেন, ‘তাঁরা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সহব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি নিয়ে কাজ করেছেন। তবে পাকাঘর নির্মাণের কাজ বন বিভাগ আপাতত বন্ধ রেখেছে।’
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শামসুন্নাহার চৌধুরী বলেন, ‘উদ্যানে আগত পর্যটকদের খাওয়া ও বসার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা নিয়মমতো অনুমতি দিয়েছি। নিয়ম ভেঙে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। অবৈধ হলে সংরক্ষিত বনে নির্মাণকাজ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাকাঘর নির্মাণ হচ্ছে জেনে তিনি কাজ বন্ধ রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির পশু-পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ছয় প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। আছে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি। এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম।
উদ্যানটিতে লজ্জাবতী বানর, চশমা পরা হনুমান, কুলু বানর, মেছোবাঘ, মায়া হরিণ বসবাস করে। এর আয়তন ২৪ হাজার ২৮২ হেক্টর। দেশের ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান অন্যতম।