পবিত্র রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে দিন দিন বাড়ছে গরমের তীব্রতা। এই মাসে সারাদিন অনাহারে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা প্রায় সব মুসলিমরাই করেন। তবে এই তীব্র গরমে রোজা রাখার ক্ষেত্রে আমাদের একটু বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ গরমের কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরমধ্যে রোজা রেখে নিজেকে এই গরমে সুস্থ রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
গ্রীষ্মের কাছাকাছি এই সময় অগণিত মানুষ সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, টনসিলের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এসময় আমাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী হওয়া জরুরি। তবে ভয়ের কিছু নেই, কিছু সচেতনতাবোধ এই সমস্যাগুলো থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রাখবে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক গরম ও রোজায় সুস্থ থাকতে কী করবেন-
> বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শরীরে ফ্যাট সেলের পরিমাণ বেড়ে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখন খুব দ্রুত বিভিন্ন ধরণের রোগ জীবাণু আক্রমণ করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ইফতারে ভাজা-পোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। সেহরিতেও খান ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার।
> সেহরি ও ইফতারে নিয়মিত সবুজ, হলুদ মৌসুমি ফল ও শাক সবজি খেতে হবে। টক ফলের মধ্যে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ভিটামিন সি ঠাণ্ডা লাগা, হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। ইফতারে প্রতিদিন কয়েক রকম ফল রাখুন। ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণের জন্য লেবুর শরবত খেতে পারেন।
> যেহেতু গরমের সময় তাই ঘাম জমে অনেকের ঠাণ্ডা লাগতে পারে। গলাব্যথা থাকলে বা টনসিলের জায়গা ফুলে গেছে মনে হলে, হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করবেন। এটি আপনি ইফতারের পর করতে পারেন। এতে অনেকটাই আরামবোধ করবেন।
> সামান্য সর্দি, কাশি, জ্বর জ্বর ভাব হলেই ওষুধ খাবেন না। শরীর খারাপ বেশি লাগলে, তখন ওষুধ খাবেন।
> ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গেলে, যেকোনো ইনফেকশন বেশি হয়ে যায়। যারা এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তারা চিকৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবারের তালিকা ঠিক করবেন।
> যাদের সাইনোসাইটিস রয়েছে অর্থাৎ খুব দ্রুত ঠাণ্ডা লেগে যায়, তাদের সব সময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করতে হবে। রান্নাঘরে ঘেমে নেয়ে রান্না করে সেই ঘামের শরীর নিয়েই গোসল করতে চলে যাবেন না। শরবতের সঙ্গে অতিরিক্ত বরফ মিশিয়ে খাবেন না। অতিরিক্ত রোদ থেকে এসেও সঙ্গে সঙ্গে গোসল করতে যাবেন না।
> জরুরি প্রয়োজনে বাসার বাইরে বের হলে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার নিতে হয়, তারা প্রয়োজনে ইনহেলার ব্যবহার করবেন। ঠাণ্ডার দিন চলে গেছে বলে ইনহেলার লাগবে না এই ধারণা ভুল। ইনহেলার ফুসফুসকে রোগ-জীবাণু মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। আমাদের চারপাশের বাতাসে ভেসে বেড়ায় অসংখ্য রোগ জীবাণু। এসব জীবাণু মুখ ও নাক দিয়ে আমাদের রক্তে প্রবেশ করে। তাই শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, সব সময় ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া থাকলেও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
> ঘাম জমে যাওয়া জামা কাপড় রোদে না শুকিয়ে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে কাপড় পড়তে হবে। জুতাও ঘামে ভিজে যায়। চামড়া ছাড়া অন্য জুতা ডেটল বা স্যাভলন পানিতে পরিষ্কার করতে পারলে ভালো হয়। মাঝে মাঝেই কড়া রোদে কিছুক্ষণ শুকিয়ে নিতে হবে। তাহলে রোগ জীবাণু ধ্বংস হবে।
> সপ্তাহে অন্তত একদিন গোসলের বালতিতে কয়েক ফোটা ডেটল বা স্যাভলন অথবা রোগ জীবাণু মুক্তকারক পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। এতে নানারকম রোগ-জীবাণু থেকে দূরে থাকা যাবে।
> কালো জিরা, মেথি, তিতা জাতীয় খাবার খেলে রক্তের জীবাণুগুলো ধ্বংস হবে। ইফতার ও সেহরিতে তিতা জাতীয় খাবার খান। ৬ মাস পর পর বাসার সবাইকে একসঙ্গে কৃমিনাশক ওষুধ খেতে হবে। তবে যারা গর্ভবতী, কিডনি বা লিভার এর জটিলতায় ভুগছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কৃমিনাশক ওষুধ খাবেন না।
> সম্ভব হলে রোদে ছাতা ব্যবহার করবেন। অতিরিক্ত ঘাম হলে বাসায় ফিরে কিছু সময় বিশ্রাম নেবেন। প্রয়োজন মনে করলে ইফতারে ওরস্যালাইন খাবেন। ওরস্যালাইন না থাকলে শরবত খাবেন। যেখানে লবণ অবশ্যই থাকতে হবে। লবণে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড। যা আমাদের দেহের পানিশূণ্যতা দূর করে। তবে যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তারা ওরস্যালাইন বাদ দিবেন। যদি হঠাৎ করে রক্তচাপ অনেক কমে যায়, তখন রক্তচাপ বাড়ানোর জন্য ওরস্যালাইন খাবেন।
> চাকরি বা জরুরি কাজে নিয়মিত বাসার বাইরে যেতে হলে সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। এতে চোখে ধূলোবালি পৌঁছাবে না।
> নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। সুস্থতায় শরীরচর্চা খুবই উপকারী।
> গ্রীষ্মকালে রোজা তাই সেহরি ও ইফতারে পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। সালাদ রান্না করে খাওয়ার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার পাওয়া যাবে বেশি।