ঈদ উপলক্ষ্যে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে শুরু হয় টিকিট বিক্রি। এদিন ১৭ এপ্রিলের টিকি বিক্রি করা হয়।
তবে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর চার মিনিটেই আগাম টিকিট শেষ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবার ঈদযাত্রায় রেলের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় স্বস্তির কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা। তবে অনেকে কাউন্টারে এসে টিকিট না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে শতভাগ অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। আগে থেকেই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে রাখা যাত্রীরা কোনো ভোগান্তি ছাড়াই পেয়ে যান টিকিট। দীর্ঘ ভোগান্তি যুগের অবসান হওয়ায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
তবে প্রান্তিক যাত্রী, যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে অক্ষম তারা আজও কাউন্টারে টিকিটের খোঁজে এসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ প্রায় ২৬ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
রেলের অ্যাপে প্রতি মিনিটে অন্তত ১০ লাখ ভিজিটর প্রবেশ করতে পারেন। প্রতি মিনিটে টিকিট বিক্রি করা যায় আট হাজার। সে হিসেবে আজকের টিকিট মাত্র চার মিনিটেই শেষ হয়ে যায় বলে জানান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার।
শনিবার (৮ এপ্রিল) বিক্রি করা হবে ১৮ এপ্রিলের টিকিট, রোববার (৯ এপ্রিল) ১৯ এপ্রিলের, সোমবার (১০ এপ্রিল) ২০ এপ্রিল ও মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিক্রি করা হবে ২১ এপ্রিলের টিকিট।
একইভাবে ঈদ ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হবে ১৫ এপ্রিল থেকে। প্রথম দিন (১৫ এপ্রিল) বিক্রি হবে ২৫ এপ্রিলের টিকিট, ১৬ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ২৬ এপ্রিলের টিকিট, ১৭ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ২৭ এপ্রিলের টিকিট, ১৮ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট, ১৯ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ২৯ এপ্রিলের টিকিট এবং ২০ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট।
অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করবেন যেভাবে
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ১৭ থেকে ৩০ এপ্রিল শতভাগ শুধুমাত্র অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ক্রয় করা যাবে।
কীভাবে যাত্রীরা অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে গত ২৫ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্মানিত যাত্রী সাধারণের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন্ন ঈদুল ফিতরে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট (১৭-৩০ এপ্রিল) শুধু অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করা যাবে। এছাড়া বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটিং ব্যবস্থা ও অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়কৃত টিকিট রিফান্ডের (ফেরত) ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
যাত্রীদের প্রতি রেলওয়ের জানানো নির্দেশনা ও শর্তাবলী হচ্ছে—
ক) আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশীরা দ্রুত জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধন যাচাইপূর্বক নিবন্ধন করবেন।
খ) নিবন্ধনের জন্য মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে BR <space> NID নম্বর <space> জন্ম তারিখ (জন্ম তারিখের ফরম্যাট- জন্ম সাল/মাস/দিন) লিখে ২৬৯৬৯ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন সফল বা ব্যর্থ হয়েছে কি না, তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
গ) https://eticket.railway.gov.bd ওয়েবসাইট অথবা ‘Rail Sheba’ app-এ সঠিক NID নম্বর ও জন্ম তারিখ verify পূর্বক অন্যান্য তথ্য দেওয়া সাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
ঘ) বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর প্রদান ও পাসপোর্টের ছবি আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।
ঙ) ১২-১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রদান ও জন্ম নিবন্ধন সনদ আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।
চ) সফলভাবে এনআইডি/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধন যাচাইপূর্বক নিবন্ধন ব্যতীত কোনো যাত্রী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে পারবেন না। স্ট্যান্ডিং যাত্রীদের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।
ছ) একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি আসনের টিকিট কিনতে পারবেন। তবে অনলাইনে টিকিট কেনার সময় সহযাত্রীদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন নম্বর লিপিবদ্ধ করতে হবে।
জ) ভ্রমণকালে যাত্রীকে অবশ্যই নিজস্ব এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি/সফটকপি অথবা পাসপোর্ট/ছবিসংবলিত আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। টিকিটের ওপরে মুদ্রিত যাত্রীর নাম ও এনআইডি নম্বর যাত্রী কর্তৃক প্রদর্শিত পরিচয়পত্রের সঙ্গে না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রথমবারের মতো এবার ঈদে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ঈদের সময় কমলাপুরের যে পরিবেশ তৈরি হয়— এটা রেলের জন্য খুবই বিব্রতকর হয়। মানুষ দুই দিন কমলাপুরে থেকেও টিকিট পায় না। সব মানুষ টিকিট পাবে না। ঈদের সময় আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনলাইনে শতভাগ টিকেট দেওয়া হবে। কমলাপুরে গিয়ে টিকিটের জন্য যাত্রীদের যেন ঘুরতে না হয় এবং তারা যেন বাসায় বসে টিকিট কাটতে পারে সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার যদি কোনো ভুল-ত্রুটি হয় তবে সেটি আগামী ঈদে সংশোধন করা হবে।