পাঁচ ঝুঁকিতে চাপে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি পাঁচ ধরনের ঝুঁকির কারণে চাপের মুখে রয়েছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। ঝুঁকিগুলো হলো- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ, জ্বালানি ঘাটতি, অর্থ প্রদানের ভারসাম্যে ঘাটতি ও রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি।

সংস্থাটি মনে করে, করোনা মহামারির সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে আবারও চাপের মুখে পড়েছে।

মূল্যস্ফীতির চাপ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ট্রেড রিফর্ম : অ্যান আর্জেন্ট এজেন্ডা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন গতকাল সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

‘স্ট্রং স্ট্রাকচার রিফর্ম ক্যান হেল্প বাংলাদেশ সাসটেইন গ্রোথ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন। এ সময় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি প্রধান আবদুল্লায়ে সেক ও কনসালট্যান্ট ড. জাহিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। দেশের অর্থনীতি একটি একক খাতের ওপর দাঁড়িয়ে। এটাকেও ঝুঁকি হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। এ জন্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনয়ন এবং প্রতিযোগিতার উন্নতি করতে সুপারিশ করা হয় বাংলাদেশকে। বাণিজ্য সংস্কারসহ কাঠামোগত সংস্কারের বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বাংলাদেশকে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে এবং প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

আবদুল্লায়ে সেক বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে পাশে থাকবে। তবে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতির ফলে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৭ দশমিক ২ বিলিয়নে পৌঁছেছে, ২০২২ সালে যা ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এটা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে। ব্যাংকের তারল্য সংকট ও ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ বাড়ছে, ফলে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। রিজার্ভের ক্ষয় হওয়ার কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক ঝুঁকিও রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির চাপে ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হবে। অর্থনীতি সচল হলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমবে, অভ্যন্তরীণ অবস্থার উন্নতি হবে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে গতি আসবে। তারপরও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, কঠোর আর্থিক অবস্থা, আমদানির ওপর বিধিনিষেধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি চলতি বছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হবে।

বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, তবে পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিশ্বের দেশগুলোকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের মহামারি পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। শক্তিশালী কাঠামোগত সংস্কার বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। দেশের অর্থনীতি একটি একক খাতের ওপর দাঁড়িয়ে, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনয়ন ও প্রতিযোগিতার উন্নতি বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনে সহায়তা করবে। এ কারণে বাংলাদেশের জন্য শুল্ক ও অশুল্ক বাধা উভয়ই কমানো গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।