হলুদ গালিচায় ঢেকে গেছে পুরো মাঠ। এ যেন দিগন্তে ছুঁয়েছে সরিষা ফুলের হলুদ আভা। ফুলের মৌ মৌ গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জন এখন নবীগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত জুড়ে।
মূলত আমন বোরোর মাঝের সময়টাই চাষ করা হয় সরিষা। স্বল্প খরচ আর সামান্য পরিচর্যায় ভালো ফলন হওয়ায় খুশি চাষিরা। শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন হলদে ফুলের মনমাতানো মৌ-মৌ গন্ধ আর অপরূপ দৃশ্য আকৃষ্ট করে যে কাউকে।
নবীগঞ্জ উপজেলায় মাঠের পর মাঠ এবার সরিষার আবাদ হয়েছে। অপরূপ এ দৃশ্য দেখে মনে হয় কৃষকরা যেন তাদের ক্ষেতে রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে রেখেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। ফসলি জমিতে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
চাষিরা আশা করছেন, এবার প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা ৫-৬ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হবে। ঘন কুয়াশা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এবার সরিষার ভালো ফলন হবে। এবার দাম ভালো পেলে আগামীতে কৃষকেরা সরিষা চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে।
উপজেলার হালিতলা গ্রামের কৃষক নারায়ন দেব নাথ বলেন, ‘এই প্রথম সরিষা চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস বীজ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এ বছর সরিষার ভালো ফলন হবে।’
আরেক সরিষা চাষি জানান, এ বছর যে পরিমাণ সরিষার ফলন হয়েছে, তাতে বিঘা প্রতি ৫-৬ মণের ওপরে ফলন পাওয়া যাবে।
এদিকে উপজেলা কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।
কৃষকদের মতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি এভাবে প্রশিক্ষণসহ যথারীতি দেখাশোনা করে তাহলে অনেক অনাবাদি জমিতে আরও বেশি সবজিসহ সরিষা চাষ করা সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা এবং সরিষার ন্যায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ধান চাষের পাশাপাশি সরিষা সহ অন্যান্য তৈল বীজ জাতীয় ফসল চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মকসুদুল আলম জানান, এবার বারি-১৭ ও বিভিন্ন ধরনের জাত মিলিয়ে, এবছর সরিষা চাষ হয়েছে ৬শ ষাট হেক্টর জমিতে যা গত বছর চাষ হয়েছিল ৩শ ৪০ হেক্টর জমিতে। শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য উন্নত জাতের বেশ কিছু প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীতে এই অঞ্চলের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য সরিষার পাশাপাশি তিল, তৃষিসহ অন্যান্য তেল বীজ আবাদের জন্য কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এদিকে সরিষা চাষের ফলে তেলের আমদানি কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।