বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি।
শীত মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এই হাওরে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। এসব অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত এখন হাওরের বিলগুলো। তবে হাকালুকি হাওরে অসাধু শিকারিরা বিষটোপ আর ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করায় দিন দিন অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে। এবারও শীতে হাওরে অতিথি পাখি আসার সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকারিরা তৎপর হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাকালুকি হাওরে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অবাধে চলছে পাখি শিকার। পাখি শিকারিরা সবসময় তৎপর থাকলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ রয়েছে অন্ধকারে। পাখি শিকার বন্ধে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় কোনোভাবেই থামছে না পাখি শিকার। পরিবেশ ও পাখিপ্রেমীসহ স্থানীয়রা পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর শীতপ্রধান দেশ থেকে হাকালুকি হাওরে নানা প্রজাতির পাখি যেমন- গুটি ইগল, বালিহাঁস, ভুতিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, ল্যাঞ্জাহাঁস, কাস্তেচরা, কুড়া ইগল, সরালি, পানভুলানি, কালিম, সাদা বক, কানি বক, পানকৌড়ি ইত্যাদি আসে। বিদেশি পাখির পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখি রয়েছে এ হাকালুকি হাওরে।
সরেজমিনে রোববার (৪ ডিসেম্বর) হাকালুকি হাওরের তুরলবিলে গেলে বিলের পাশের মহিষের রাখাল বেলাগাঁও গ্রামের মুজিবুর রহমানের বাড়িতে বস্তাবন্দী বেশ কিছু পাখি পাওয়া যায়। তখন রাখাল মুজিবুর রহমান বাড়িতে ছিলেন না। তাকে খবর পাঠিয়ে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রামের নজু মিয়ার ছেলে হোসেন মিয়া বিষটোপ দিয়ে পাখিগুলো ধরে কেটে করে তার বাড়িতে রেখেছেন।
মুজিবুর রহমান আরও জানান, নাগুরা বিলের ইজারাদার ফয়েজ মিয়া রোববার সকালে আরও বেশ কিছু জীবিত পাখি শিকারির হাত থেকে উদ্ধার করে বিলে ছেড়ে দেন।
পরে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাখি শিকারি হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর বস্তার ভেতরে থাকা পাখিগুলো স্থানীয়দের সহায়তায় বিলের পাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, অবাধে পাখি শিকারের কারণে হাওরে পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। পাখি রক্ষায় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাখি শিকার বন্ধে বন বিভাগের লোকবল সংকট রয়েছে। অবিলম্বে বন বিভাগের লোকবল সংকটে নিরসন করে শিকার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
পাখি শিকার চলছে স্বীকার করে বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, লোকবল সংকটে অনেক সময় পাখি শিকারিদের ধরতে আমাদের বেগ পেতে হয়। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পাখি শিকার বন্ধে আমাদের প্রধান অন্তরায় লোকবল সংকট। মাঝে মধ্যে আমরা বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারের খবর পাই। এ ব্যাপারে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপরও যদি কেউ পাখি শিকার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।