কমিটি বিলুপ্তির দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো নতুন কমিটির মুখ দেখেন নি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। একাধিকবার নতুন কমিটি গঠনের গুঞ্জন শুনা গেলেও কবে আসবে নতুন কমিটি? তা নিয়ে বলতে পারছেন না কেউ-ই। বারবার ঢাকায় গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরেছেন পদপ্রত্যাশীরা। নতুন কমিটির দেখা না পাওয়ায় বুক ভরা কষ্ট আর হতাশা নিয়ে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন অনেক নেতা-কর্মী। বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন কেউ কেউ।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে নতুন কমিটির কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় এখন কেবল হতাশায় দিন পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। চলতি মাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর ফের আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগের এই ইউনিট। এরপর থেকে ফের ঢাকামুখী হয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। বারবার কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েও নতুন কমিটি না পাওয়ায় এখন কেবল নতুন কমিটির আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে ‘চাতক পাখির মতো’ তাকিয়ে আছেন তারা।
ছাত্রলীগসূত্রে জানা যায়, শাবি ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১৩ সালের ৮ মে। এরপর গত বছরের ১৭ই জুন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। সর্বশেষ কমিটির পর দীর্ঘ ৯ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো নতুন কমিটির মুখ দেখে নি ছাত্রলীগের এই ইউনিট। কমিটি না আসায় আশাহত হয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে গিয়েছেন অনেক নেতা-কর্মী। ক্যাম্পাসে যারা আছেন তারাও অনেকটাই আশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে দিনদিন নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের এ ইউনিট।
এছাড়া নেতাদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল, গ্রুপিং রাজনীতি, হতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ কর্মীর রাজনীতি থেকে বিমুখতার কারণে নতুন নেতৃত্ব না গড়ে উঠাকেই নেতৃত্বশূন্য হয়ে উঠার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন ছাত্রলীগের অধিকাংশ কর্মী। ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিং এ দেখা যায়, কমিটি না থাকায় নেতাদেরকে মানছেন না কর্মীরা। বিভিন্ন মিছিলে সামনের সারিতে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে একাধিকবার হাতাহাতি, ধস্তাধস্তির মতো ঘটনাও ঘটেছে।
নেতাদেরকে পিছনে রেখে সামনে সারিতে দাড়ানোর চেষ্টা করেন কর্মীরা। ফলে সামনের সারিতে রাস্তার বাইরে গিয়েও দাঁড়াতে দেখা যায় নেতাকর্মীদেরকে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কয়েকটি গ্রুপের নেতারা মিলে অন্য গ্রুপের নেতাদেরকে সামনের সারিতে দাঁড়াতে দেয় না। ফলে এক গ্রুপ থেকে দুই জন, আরেক গ্রুপ থেকে তিন জন কিংবা চার জন করে সামনে সারিতে দাঁড়াতে চায়। যার কারণে অন্য গ্রুপের কর্মীরাও সামনে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। আর এতে মাঝেমধ্যে হট্টোগোল লেগে যায়।’
এছাড়া কর্মীদের মান উন্নয়নেও কোনো কাজ করছেন না নেতারা। শুধুমাত্র জাতীয় দিবসগুলোতে র্যালি, বিক্ষোভ মিছিল ও বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত দুই একটি আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছেন নেতারা।
এদিকে গত বছরের ৩১ মে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ, ১২ অক্টোবর সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। চলতি বছরের ২৯ শে জুলাই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন হয়। ছাত্রলীগের এসকল ইউনিটের নতুন কমিটির ঘোষণায় শাবি ছাত্রলীগ নেতাদের মনে বারবার আশা জাগালেও ফের আশাহত হয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হতাশা প্রকাশ করে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘কি বলবো ভাই! কেন্দ্রীয় নেতাদের পিছনে পিছনে ঘুরতে ঘুরতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতেও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটে নতুন কমিটি ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে আটকে আছে শাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। এখন কোনো পরিচয় ছাড়াই ক্যাম্পাস ছাড়তে হচ্ছে আমাদেরকে।’
নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার কলে দিলে তিনি কল রিসিভ করেন নি। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা জানিয়েছেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরমধ্যে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগও রয়েছে।’