মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় হাম সুংহ (৬০) নামে খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে চলছে তোলপাড়। হাসপাতালের এক ব্রাদার ও স্থানীয় তাজমহল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাব টেকনিশিয়ানের যোগসাজশে পুলিশকে অবহিত না করে এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যদিও মৃতের কপালে আঘাতজনিত দাগ ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কুলাউড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোববার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে মাথা ফাটা অবস্থায় উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের নুনছড়া পানপুঞ্জির বাসিন্দা হাম সুংহকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাজমহল ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। মাথায় আঘাতের কারণে ওই ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক ডা. এন বি ত্রিপুরা তার কপালে একটি সেলাই দিয়ে তাকে কুলাউড়া হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
কুলাউড়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাম সুংহকে ইসিজি করানোর কথা বলেন। কিন্তু এরই মধ্যে মারা যান ওই রোগী। হাসপাতালে ইসিজি না করে তাজমহল ডায়গনস্টিক সেন্টারের ল্যাব অপারেটর প্যাসেস খোংলা হাসপাতাল থেকে রোগীকে ফের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসা হয়। এরপর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে পাঠিয়ে দেওয়া নুনছড়া পুঞ্জিতে।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আরিফ হোসেন ও ব্রাদার সোহেল আহমদ মাথায় গুরুতর আঘাতজনিত রোগীকে সিলেটে রেফার না করে এবং পুলিশকে ঘটনা অবহিত না করে লাশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপারেটরের কাছে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে এলাকাজুড়ে।
জানা যায়, ল্যাব অপারেটর প্যাসেস খোংলাও একজন খাসিয়া। তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী কুকিজুড়ী পানপুঞ্জিতে। তিনি ঘটনা ধামাচাপা দিতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডেকে লাশ এলাকায় পাঠিয়ে দেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও তাজমহল ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ পুলিশকে না জানিয়ে লাশ দ্রুত এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়ায় হাম সুংহর মৃত্যু নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তাজমহল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাব অপারেটর প্যাসেস খোংলা পুলিশকে না জানিয়ে কেন লাশ পানপুঞ্জিতে পাঠিয়ে দিলেন- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। শুধু খাসিয়া বলে তিনি তাদের সহযোগিতা করেছেন বলে জানান।
কুলাউড়া হাসপাতালে কর্তব্যরত ডা. আরিফ হোসেন জানান, তিনি ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কাউকে কিছু বলবেন না। এমনকি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ডাক্তারের এ ধরনের আচরণে হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ডা. এন বি ত্রিপুরা বলেন, রোগীকে আমার কাছে নিয়ে আসার পরও কপালে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এসময় রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন মনে করে আমি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।
কুলাউড়া থানার এসআই পরিমল চন্দ্র দাস জানান, ডা. এন বি ত্রিপুরা তাকে জানিয়েছেন তিনি মাথায় একটি সেলাই দিয়ে হাসপাতালে পাঠান রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য। হাসপাতালে নেওয়ার পর রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজনের সাথে কথা বলেছেন। এলাকায় গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন।
কুলাউড়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাকির হোসেন জানান, এ ধরনের পরিস্থিতিতে আগে পুলিশকে জানাতে হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও ব্রাদার দায় এড়াতে পারেন না। তারাই এর জবাব দেবেন।