বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে ফের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া চারটি মর্টার শেল এসেছে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইকবাল নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন রোহিঙ্গা শিশুসহ পাঁচজন।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহতরা হলেন- ১০ বছরের সাদিয়া জান্নাত, তার মা সাবেকুন নাহার, নবী হোসেন, মো. ভুলু ও মো. আনাছ। এর মধ্যে আনাছ বাংলাদেশি।
তুমব্রু রোহিঙ্গা ক্যাম্প কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সন্ধ্যার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাত ৮টার দিকে শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে এসে পড়ে তিনটি মর্টার শেল। ক্যাম্পের নিটকবর্তী এলাকায় এসে পড়ে আরও একটি মর্টার শেল।
অপর রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আরিফ জানান, আহতদের মধ্যে চারজনকে উদ্ধার করে কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিজিবি, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই সীমান্তেই হেডম্যানপাড়ার ৩৫ নম্বর পিলারের ৩০০ মিটার মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন এক বাংলাদেশি যুবক।
আহত অন্নথাইং তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তমব্রু হেডম্যানপাড়ায়।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম জানান, শুক্রবার দুপুরে ওই বাংলাদেশি যুবক গরু চোরাচালানের উদ্দেশ্যে তমব্রু সীমান্ত এলাকায় ৩৫ নম্বর পিলারের কাছাকাছি কাঁটাতার পেরিয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যান। সেখানে পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রায় এক মাস ধরে সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেলসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
গত ২৮ আগস্ট তমব্রু উত্তরপাড়ায় এসে পড়েছে একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল। সেদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়।
গত ১ সেপ্টেম্বর ওই সীমান্ত এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহের সময় তমব্রুর পশ্চিম, উত্তর ও মধ্যমপাড়ায় পরপর ১৫টি ভারী অস্ত্র নিক্ষেপের শোনা যায়।
সেদিন শূন্যরেখার কোনারপাড়া আশ্রয় শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘গুলির শব্দে ঘুমাতে পারছি না। মনে হচ্ছে ক্যাম্পেই গুলি ছোড়া হচ্ছে। সকাল ৬-৭টার দিকে শুরু হয় গোলাগুলি, চলে গভীর রাত পর্যন্ত।’
গত ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার তিন দিন পর ফের ওই সীমান্তে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ ভেসে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, বিভিন্ন সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন মিয়ানমার সীমান্তে (রাখাইন রাজ্যের তমব্রু এলাকায়) সশস্ত্র বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে গুলি ছাড়াও মর্টার শেলের মতো ভারী অস্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে।
একই তথ্য দিয়েছিলেন বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান। তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে ওদের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঝামেলা চলছে। আমরাও বিষয়টি জেনেছি। যা কিছু ঘটছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে।’
ঘটনা কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা হবে বলে গত ১১ সেপ্টেম্বর জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা কূটনৈতিকভাবে দেখব। আমরা তো যুদ্ধ করতে যাচ্ছি না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধান করব। আজকের সিচুয়েশন, সেখানে গোলাবারুদ কমে গেছে।’