সিলেটের সকল চা বাগানগুলোতে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সিলেটের মালনীছড়া, তারাপুর, কালাগুল, আলীবাহার, দলদলি, লাক্কাতুরা, জাফলং, খাঁন চা বাগানসহ জেলার ২৩টির সবক’টি চা বাগানের শ্রমিক দলে দলে কাজে যোগ দেন।
গতকাল রবিবার (২৮ আগস্ট) সিলেটের ২৩ টির মধ্যে ১৪টি চা বাগানের সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সবাই কাজে যোগ দিতে না পারলেও আজ সোমবার শতভাগ চা বাগানে শ্রমিকদেরকে কাজে যোগদান করতে দেখা যায়।
এদিকে মৌলভীবাজারের সকল চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে উপজেলার কালিঘাট, ফুলছড়া ও সাতগাঁওসহ জেলার সব চা বাগানের শ্রমিক দলে দলে কাজে যোগ দেন। কাজে যোগ দিয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার শতভাগ চা বাগানের শ্রমিকরাও।
কাজে ফেরা শ্রমিকরা বলেন, ‘১৯ দিন ঘরে বসে ছিলাম। দুই বেলা আটা-রুটি, আর এক বেলা ভাত খেয়েছি। কোনও কোনও দিন কিছুই খেতে পারিনি। বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। আজকে কাজে আসছি, মজুরি পাবো, তারপর ডাল-ভাত খাইতে পারবো। আন্দোলনের সময় দোকানদার বাকিতে কিছু দিতো না। কত কষ্টে কাটাইছি। আমরা সবাই ক্যাজুয়াল শ্রমিক। যারা পার্মানেন্ট তারা ১৭০ টাকা পাবে। আর ক্যাজুয়াল শ্রমিক তাদের চেয়ে একটু কম পাবে। আমাদের দাবি, সবাইকে সমান মজুরি দিতে হবে।’
তারা বলেন, ‘রবিবার (২৮ আগস্ট) সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এই বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেননি। আজ থেকে সবাই পুরোদমে কাজে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ১৭০ টাকা মজুরি সবাই খুশি। তবে দাবি একটাই, ক্যাজুয়াল শ্রমিকরা যেন সমান মজুরি পায়।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘আজকে শতভাগ শ্রমিকরা কাজে গেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্থায়ী শ্রমিক যে মজুরি পায় এবং একজন ক্যাজুয়াল শ্রমিক যাতে সমান মজুরি পায়, সেটা চুক্তিতে উল্লেখ আছে। কিছু কিছু বাগানে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দিয়ে থাকে। এখন মজুরি বাড়ছে, বাগান মালিকরা ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের কত দেবে, সেটা পরে জানতে পারবো।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারণ করে দেওয়া ১৭০ টাকা মজুরির প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে চা শ্রমিকররা বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারণ করে দেওয়া মজুরীতে খুশি। তবে মালিকপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ আমাদের মৌলিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা) গুলো যেন যথাযথভাবে পূরণ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন এদিকটা খেয়াল রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর নজর থাকলে আমরা আমাদের এসব মৌলিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত হবোনা বলে আমরা আশাবাদি।’
শ্রমিকরা তাদের রেশন ৩ কেজি থেকে বাড়িয়ে ৫ কেজি করারও দাবি জানান।
এদিকে আগামী ২ সেপ্টেম্বর চা বাগানের শ্রমিক নেতাদের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
শ্রমিক নেতা রাজু গোয়ালা জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। আলোচনায় আমরা শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদার বিষয়টি তুলে ধরবো। যাতে করে চা শ্রমিকরা আর তাদের এসব মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত না হন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারণ করে দেওয়া মজুরিতে আমরা সন্তোষ্ট। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যেন চা বাগানগুলোর মনিটরিং ব্যবস্থা করা হয় এটা আমাদের আবেদন থাকবে।’
প্রসঙ্গত, ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছিলেন না অনেকে।
চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণে শনিবার (২৭ আগস্ট) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৩ জন চা শিল্প মালিকের বৈঠক হয়। বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পরদিন থেকে কাজে যোগ দিচ্ছেন চা শ্রমিকরা।